ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আইস’ ব্যবসায় উচ্চবিত্ত-উচ্চশিক্ষিত সিন্ডিকেট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
‘আইস’ ব্যবসায় উচ্চবিত্ত-উচ্চশিক্ষিত সিন্ডিকেট

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরায় হাউস পার্টির আড়ালে উচ্চবিত্ত পরিবারের বিপথগামী শতাধিক তরুণ-তরুণী মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে। এসব আখড়ায় আইস সরবরাহ করছে চারটি সিন্ডিকেট।

২০ থেকে ৩০ জন আইসসেবী আছে, যারা চার ডিলারের সঙ্গে মিলে বিক্রিও করে। সিন্ডিকেট সদস্যরা নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইয়াবার মতো কক্সবাজার থেকে আইস এনে মজুদ করে। পরে বিক্রেতার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ক্রেতারা এসব বিক্রেতাকে ‘স্টাফ সাপ্লাইয়ার’ নামে চেনে। নিজেদের কাছে আইস রেখে সরবরাহ করার জন্য এদের কয়েকজনকে দৈনিক এক হাজার টাকা করে বেতন দেন ডিলাররা। আবার দু-একজন বিক্রেতার মাসিক আয় লাখ টাকার বেশি। কয়েকজন বিক্রেতা আছেন, যাঁরা উচ্চবিত্ত পরিবারের, বিদেশে লেখাপড়া করা। আসক্তি থেকে তাঁরা এই চক্রে জড়িয়েছেন। কিছু ক্রেতা আবার হাউস পার্টিতে অন্যদের কাছে অল্প পরিমাণে আইস বিক্রিও করে। সম্প্রতি ১০ আইস কারবারি ও ক্রেতাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব তথ্য পেয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে বনানীর চিহ্নিত মাদক কারবারি জবির খানসহ তিনজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে তদন্তকারী দল। তবে টের পেয়ে তাঁরা গাঢাকা দিয়েছেন।

ডিএনসির মহাপরিচালক আবদুস সবুর মণ্ডল বলেন, কক্সবাজার ও ঢাকায় আমরা আইসের বড় চালান ধরেছি। আমাদের নজরদারি ও তদন্ত অব্যাহত আছে। আইসসহ নতুন মাদকের ব্যাপারে অধিদপ্তরের প্রতিটি সদস্য কাজ করছে। যারা এসব মাদকের কারবার করে তাদের তথ্য বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, ব্যবসায়ী মিশু হাসান, তার সহযোগী জিসান গ্রেপ্তারের পর নজরদারির মাধ্যমে গত ২০ আগস্ট আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। এদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। গত ২৬ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত পাঁচজনের এক দিন করে এবং ৩১ আগস্ট দুজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদের মধ্যে রোহিত হোসেন, মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান, হাসিবুল ইসলাম, রুবায়াত, রাজ ও মুসাউল বাবরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে থাইল্যান্ড থেকে আসা জবির খান, হোটেলকেন্দ্রিক শাকিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ইডেনসহ কয়েকজন বিক্রেতার নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে বার্মাইয়া নূর, নবী হোসেন, হারুনুর রশীদ এই তিনজন বড় কারবারি দীর্ঘদিন ধরে আইস বিক্রি করছে।  

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে আরো চারজনের নাম পাওয়া গেছে, যারা নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে আইস এনে বিক্রেতার মাধ্যমে সরবরাহ করে। এই বিক্রেতাদের অন্যতম হাসিব, রোহিত, ইভান। মেহেরপুরের গাংনীর হাসিবের কাছে ২৫০ গ্রাম আইসের পাশাপাশি ইয়াবাও পাওয়া গেছে। টেকনাফ থেকে মাদক আনা এক ডিলারের কাছ থেকে এসব মাদক সংগ্রহ করে সে অভিজাত এলাকার কারবারিদের দেয়। এ জন্য ডিলার তাকে দিনে এক হাজার টাকা করে দেন। আইস ও ইয়াবাসেবী বাবর তার ডিলারের কাছ থেকে মাসে এক লাখ টাকার বেশি পায়। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ইডেন নিয়মিত কয়েকজনের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে। এদের মধ্যে রয়েছে রামপুরার কমল, বনানীর জবির খান, রোহিত, পালেল ও বনশ্রীর সোহেল।

গ্রেপ্তার রোহিতের বাবার উত্তরায় একটি মার্কেট আছে। মালয়েশিয়ায় ব্যবসায় প্রশাসনে লেখাপড়া করা রোহিত জড়িয়ে পড়েছে আইস সিন্ডিকেটে। আরেক কারবারি বাবরের সিন্ডিকেটও ছোট ছোট আইসের চালান নেয় রোহিতের কাছ থেকে। গ্রেপ্তার আরেক বিক্রেতা রুবায়েত লেখাপড়া করেছে ইংল্যান্ডে। বাবরের সিন্ডিকেটে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্রী নুসরাত ভুইয়া জড়িয়েছে। অন্য সিন্ডিকেট থেকেও আইস কিনে সে। ইডেন ইব্রাহিম এই সিন্ডিকেটেরও বিক্রেতা।

নাম এসেছে হাতিরঝিলের জাফর সোহেল, চট্টগ্রামের জায়েন, গুলশানের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফয়সাল রাসেল, তওসিফ হাসান, মারুফ তওসির, জয় রাজিব, শাহবাজ হোসেন, বাড্ডার সোহানুর রহমানের। দুই সিন্ডিকেটেই ক্রেতা ও বিক্রেতা হিসেবে হৃদিতা রহমান নামের এক তরুণীর নাম রয়েছে।

এ ছাড়া ক্রেতা ও ক্ষুদ্র বিক্রেতা হিসেবে জান্নাতুল, বিশাল, সানি, সামিয়া আজাদ, নিশা, জুবায়ের, মেহনাজ, মির্জা, লগ্ন, বিকি, আসিফ, রাজ, হাসান, ইজাজুল, জমিল, নাতাশা, তাহমিদ, আকিকুলসহ কয়েকজনের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।