বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম চন্ডিপুর। শখের বশে প্রথমে ৩০ টাকায় একটি ক্যাকটাস কিনে বাড়িতে লাগিয়েছিলেন এ গ্রামের যুবক আলতাফ হোসেন।
প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ও ক্রেতারাও আসছেন এ নার্সারিতে। চাহিদা সম্পন্ন ক্যাকটাসের চাষ সম্প্রসারিত হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসবে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
মরা বলেশ্বর নদীর পাশের এ গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন চাকরি করেন পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার রুপসী বাংলা নামের স্থানীয় একটি এনজিওতে। ২০১০ সালের কোনো এক দিনে পিরোজপুর বাজার থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি ক্যাকটাস কিনে বাড়িতে আনেন তিনি। পরম যত্নে ক্যাকটাসটি বড় করেন। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই নতুন নতুন প্রজাতির ক্যাকটাস কিনতেন আলতাফ। বাড়িতে ক্যাকটাসের সংখ্যা ও প্রজাতি বাড়তে থাকে। ক্যাকটাসের সঙ্গে অর্কিড, সাকুলেন্ট, বনসাই, অ্যাডেনিয়াম, ঝুলন্ত গাছও কেনেন তিনি। একপর্যায়ে পরিধি বাড়ায় ২০১৬ সালে ঘরের সামনের তিনটি শেড করে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাকটাসের চাষ শুরু করেন। পরে আরও দু’টি শেড তৈরি করে নার্সারি বড় করেন আলতাফ। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আরও বেশি ক্যাকটাস ও অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক গাছ সংগ্রহ করতে থাকেন। বর্তমানে তার এ নার্সারিতে ২৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, নানা প্রজাতির অর্কিড, সাকুলেন্ট, বনসাই, অ্যাডেনিয়াম ও শোভাবর্ধক ঝুলন্ত গাছ রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকা, থাইল্যান্ড, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ অন্তত আটটি দেশের ক্যাকটাস রয়েছে। দেশি-বিদেশি ক্যাকটাসের মধ্যে রয়েছে রেবুসিয়া, মেলো, ফেরো, গোল্ডেন ব্যারেল, বানিয়ইয়ার-অপানসিয়া, ক্রিসমাস, এস্টার জিমনো, লিথসপ, মুন ইত্যাদি। এর সঙ্গে রয়েছে শতমূলী, ঘৃতকুমারী, লজ্জাবতীসহ নানা প্রজাতির ঔ ষধি গাছ। যার বাজার মূল্য অন্তত সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা। গাছের সঙ্গে ক্যাকটাস রেডিমিক্স সয়েল, সাকুলেন্ট সয়েল, কোকোপিট, হাড়ের গুড়াসহ ক্যাকটাস চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও বিক্রি করেন তিনি। এ নার্সারির একেকটি গাছ ১৫০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা থেকে প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন আলতাফ। অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই তার গাছ বিক্রি হয়। করোনাকালে অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে।
পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট জেলার মধ্যে হলেও ক্যাকটাস নার্সারিটি আমার অফিস থেকে খুবই কাছে। তাই এখানে প্রায়ই আসি। মাঝে মধ্যে গাছ কিনি। খুবই ভালো লাগে নার্সারিটি আমার। মাঝে মধ্যে পরিবারসহও আসা হয় এখানে।
ফিরোজ হাওলাদার বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের খাল পার হয়েই আলতাফ ভাইয়ের ক্যাকটাস নার্সারি। হরেক রকম গাছ দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগে।
নার্সারির মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, রুপসী বাংলা এনজিওতে চাকরির পাশাপাশি এ নার্সারিতে সময় দিই। গাছগুলোর যত্ন করি। ক্যাকটাসসহ অন্যান্য গাছের যত্ন এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। অনলাইন-অফলাইন দুইভাবেই গাছ বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় আমার। ফেসবুকে অর্ডার দিলে আমরা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিই। নার্সারির সামনে এলে খুবই ভালো লাগে। নার্সারিটি আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা আছে।
ক্যাকটাস চাষ, ব্যয় ও নতুন উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে আলতাফ হোসেন বলেন, ক্যাকটাস খুবই চাহিদা সম্পন্ন একটি সৌখিন উদ্ভিদ। এটি সাধারণ মাটিতে হয় না। এর জন্য হারের গুড়া, মাটি, বালু, কয়লা, ইট, কোকোপিট (নারকেলের ছোবড়ার গুড়া), কাঠের গুড়াসহ নানা উপকরণ দিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়। অতিরিক্ত রোদ অথবা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্যাকটাস থাকতে পারে না। এ জন্য খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নতুন চাষ শুরুর জন্য ব্যয় খুব বেশি নয়। তবে আগে এ গাছের পরিচর্যা শিখতে হবে।
তারপর অল্প অল্প করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যাকটাস একটি চাহিদা সম্পন্ন সৌখিন উদ্ভিদ। বর্তমানে দেশি-বিদেশি বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রজাতি ভেদে নিম্ন ও উচ্চ মূল্যে এ উদ্ভিদ বিক্রি হয়। আলতাফ ক্যাকটাস চাষে সফলতা পেয়েছেন। অন্য কোন কেউ যদি ক্যাকটাস চাষ করতে চান, আমরা তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবো।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
এসআই