ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বৃষ্টি হলেই ডোবে খুলনা, উন্নয়নের নামে টাকার শ্রাদ্ধ!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
বৃষ্টি হলেই ডোবে খুলনা, উন্নয়নের নামে টাকার শ্রাদ্ধ!

খুলনা: রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাথ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও সেইসব এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় হাঁটু পানি।

অনেক এলাকায় উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও জলাবদ্ধতার পুরনো ভোগান্তি রয়ে গেছে।  তাহলে এক টাকা খরচ করে উন্নয়ন করে লাভ কী হলো?

খুলনা মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্র রয়্যালের মোড় এলাকার একটি পরিবহন কাউন্টারের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভ আর আক্ষেপ নিয়ে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক ডুবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

ইসলামপুর রোডের বাসিন্দা ইলিয়াস বলেন, টানা আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই রয়্যালের মোড়, শান্তিধাম মোড়, পিটিআই মোড়, সাত রাস্তার মোড় সংলগ্ন ইসলামপুর সড়ক, শামসুর রহমান রোড, খানজাহান আলী রোড, টুটপাড়া, বাইতিপাড়া, দোলখোলা, কেডিএ এভিনিউ, সোনাডাঙ্গা, আহসান আহমেদ রোড, শিববাড়ী, জীবনবীমা এলাকা, শেখপাড়া, তেঁতুলতলা, মিস্ত্রী পাড়া, বিআইডিসি রোড, গোবরচাকা, এম এ বারি লিংক সড়ক, শিপইয়ার্ড সড়ক, মোক্তার হোসেন সড়ক, মুজগুন্নি আবাসিক, নিরালা, গল্লামারী, খালিশপুর ও দৌলতপুরের বিভিন্ন সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।

মুষলধারে বৃষ্টির পানিতে পয়োঃবর্জ্যে সয়লাব হয়ে যায় রাস্তা। অনেক জায়গায় বর্জের অংশ ড্রেনে আটক গিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজে ধীর গতির কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

নগরীর শামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা রোমেল জানান, একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি মাড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। আশপাশের সব বাড়ি ঘরের নিচতলা তলিয়ে যায়।

নাগরিক নেতারা আক্ষেপ করে বলছেন, মহানগরীর সড়ক মেরামত ও উন্নয়নে এবং শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে মোট ১৪শ কোটি টাকার দু’টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকার সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্প ও ৮২৩ কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প। বিশাল অংকের খরচ হলেও নগরবাসীর সামান্য উপকার হচ্ছে না।

জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির স্বীকার হয়ে অনেকেই বলেন, কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় নগরীর বড় অংশ। বার বার সমস্যা সমাধানে হাঁকডাক দেওয়া হলেও কার্যত সমস্যার সমাধান হয় না। শুধু উন্নয়নের নামে টাকার শ্রাদ্ধ হয়।

জানা যায়, ২০১৯-২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাথ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে খুলনা মহানগরীর কেডিএ এভিনিউ ও আবু আহমেদ সড়কে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার পুরনো ভোগান্তিই রয়ে গেছে ওই এলাকার মানুষের। অনুরূপভাবে শামসুর রহমান রোড, খানজাহান আলী রোডের একাংশ, আহসান আহমেদ রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হলেও জলাবদ্ধতার সেই আগের ভোগান্তি রয়ে গেছে নগরবাসীর।

অভিযোগ রয়েছে, অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত, ত্রুটিযুক্ত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজে ধীর গতির কারণে খুলনা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।  মহানগরীর ২২টি খালের অধিকাংশ খাল দখলে থাকার ফলে এগুলোর বেশিভাগরই আয়তন সংকুচিত হয়েছে। খালগুলোর যখন এই অবস্থা তখন শহরে পানির চাপ বাড়ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়ন কাজের দীর্ঘসূত্রিতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। এছাড়া মহানগরীর আশপাশের ২২টি খাল এখনও দখলমুক্ত করা যায়নি। রাস্তার ওপর ইট বালু রাখার কারণে বালু ধুয়ে ড্রেন আটকে যাচ্ছে। যার কারণে বৃষ্টির পানি অনেক জায়গায় নামতে পারছে না। এছাড়া কেডিএ, কেসিসি, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয় নেই। যার যখন প্রয়োজন হয় তখন রাস্তা খোঁড়া শুরু করে। পরে আর সুন্দরভাবে মেরামত করে না। ফলে যান চলাচল ও পথচারীদের ভোগান্তি বাড়ে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বাংলানিউজকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করে বর্ষার আগে শেষ না হলে শহর তো তলিয়ে যাবেই। শহর তলিয়ে গেলে যেমন জনদূর্ভোগ বাড়ে তেমনি কিছু রোগেরও প্রাদুর্ভাব বাড়ে। আমার মনে হয়, যারা উন্নয়ন কাজগুলো করেন তাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে করা উচিত। যারা কাজ করে তারা কি পরিকল্পনা করে তারা জানে আর আল্লাহ জানে। শহরে উন্নয়ন হয়েছে দুর্ভোগও বেড়েছে। ২২ খাল উদ্ধার প্রকল্প পেপার বক্সে চলে গেছে। কোনো নাড়াচাড়াও নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
এমআরএম/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।