ফরিদপুর: ফরিদপুরে দুই দফা বন্যায় প্রায় ৯৭ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৯০৩ জন কৃষক।
কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রথম দফার বন্যাতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গিয়ে বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় পানি বেড়ে নষ্ট হয় ধান, সবজি ক্ষেত ও কলার বাগান।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের তায়জুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক সিদ্দিক জমাদার (৪৮)। ১৫ একর জমিতে কলার বাগান করেছিলেন তিনি। বাগানটি বন্যার পানিতে ডুবে যায়। পরে পানি নেমে গেলেও একের পর কলাগাছ মারা যেতে থাকে।
সিদ্দিক জমাদার বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অন্তত পাঁচ একর জমিতে রোপণ করা প্রায় এক হাজার ৬০০ কলা গাছ মরে গেছে। এই কলা বেঁচেই তিনি পরিবারের বাৎসরিক খরচ চালাতেন। তবে শুধু সিদ্দিক জমাদারই নন, ফরিদপুরে চলতি বছরের দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় আট হাজার কৃষক।
স্থানীয়রা জানান, ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রথম দফায় বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার এবং দ্বিতীয় দফায় ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এখন পানি নেমে গেলেও সর্বত্র রয়ে গেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলায় সাত হাজার ৯০৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভাঙ্গা উপজেলায়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা তিন হাজার ৪৩০ জন। সবচেয়ে কম মধুখালীতে ২১০ জন।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বাসিন্দা নায়েব আলী সরদার (৩৫) বলেন, কাইমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ (৬০) ৩৩ শতাংশ জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলেন। বন্যায় তার ৭৫ ভাগ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের জয়নাল মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক রজ্জব মাতুব্বর (৫০) বলেন, তার ১০ একর জমির মধ্যে তিন একর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, দুই দফা বন্যায় ফরিদপুরে ৯৭ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৯০৪ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৬২১ হেক্টর রোপা আমন, ২ হেক্টর আউশ (উফসী), ৯ হেক্টর আউশ (স্থানীয়), ১৯৫ হেক্টর বোনা আমন, ৭ হেক্টর কলা, ১৫ হেক্টর কাঁচা মরিচ এবং ৫৪ হেক্টর সবজি রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পর দুই হাজার ১০ জন কৃষকের জন্য পাঁচ কেজি মাসকলাইয়ের বীজ ও ১৫ কেজি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বীজ ও সার ছয় উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। বিএডিসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে কৃষকরা পরিবহন ব্যয় বরাদ্দ পাবেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এনএসআর