ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীর যাবজ্জীবন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীর যাবজ্জীবন

ফেনী: ফেনীর ব্যবসায়ী কায়সার মাহমুদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে একমাত্র আসামি নিহতের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার নাদিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৩সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী কায়সারের পিতা আবুল খায়ের বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। এ মামলায় ফাঁসি হওয়ার উচিত ছিল। আমরা সুবিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবো।

প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ বলেন, কায়সার হত্যা মামলায় শাহনাজ নাদিয়া জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

আসামীপক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নির্ভর করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা যথাযথ রায় পাইনি। অচিরেই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

কায়সার মাহমুদের ভগ্নিপতি সাইফ উদ্দিন মাহমুদ জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পাইনি। এ রায়ে কায়সার মাহমুদের পরিবার আশাহত হয়েছে। নাদিয়া আত্মস্বীকৃত খুনী। তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। কায়সারের পরিবারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার এ রায়ের দিন ধার্য করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ জানান, এ মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল।
১৫ সেপ্টেম্বর কায়সার হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল ইসলাম খান ও মরদেহ বহনকারী কনস্টেবল আবদুল মতিনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ মামলার বাদী প্রফেসর আবুল খায়ের, ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কায়সার হত্যা মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রামপুর ভূইয়া বাড়ির নজির সওদাগর বাড়ির প্রফেসর আবুল খায়েরের ছেলে কায়সার মাহমুদের সাথে আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে শাহনাজ নাদিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকমাস পর তাদের মধ্যে মনমালিন্য দেখা দেয়। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ শাহনাজ নাদিয়া কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লতিফ টাওয়ারে তার বাবার বাসায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে ১১ এপ্রিল বিকেলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য কায়সারদের বাসায় আসেন। কাওসারসহ নাদিয়া ডাক্তার দেখানোর জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে আর কাওসারের বাসায় ফিরেনি।

সেইদিন রাতে ফালাহিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানের পাশে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা কাওসারকে ছুরির আঘাত করে পালিয়ে যায়। তখন তার সঙ্গে স্ত্রী নাদিয়াও ছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ১২ এপ্রিল দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ওই রাতেই তার বাবা প্রফেসর আবুল খায়ের বাদী হয়ে শাহনাজ নাদিয়া ও তাদের বাড়ির মো. হারুনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর হোসেন বাসা থেকে শাহনাজ নাদিয়াকে গ্রেফতার করে ১৩ এপ্রিল বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নেন। নাদিয়া ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে কায়সারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি কায়সারকে একাই হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দেন। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর হোসেন চাঁদপুর বদলি হওয়াতে ২০১৪ সালের ০৭ জুন তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই কামরুল ইসলামকে।

এ মামলার অপর আসামি বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের মৃত মো. হাফেজের ছেলে মো. হারুন একই বছর আগস্ট মাসে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হারুন ও নাদিয়াকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বাদী প্রফেসর আবুল খায়ের আদালতে আপত্তি জানালে পুনঃতদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে নাদিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে  অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামরুল ইসলাম।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আলতাফ হোসেন জানান, গত ২৪ মার্চ সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হওয়ার তারিখ ধার্য করেন আদালত। করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
এনএইচআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।