ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

মায়ের মরদেহ দাফনে সন্তানের বাধা 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৬, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
মায়ের মরদেহ দাফনে সন্তানের বাধা  মায়ের মরদেহ দাফনে সন্তানের বাধা 

শ্রীপুর (গাজীপুর): মায়ের কাছে সন্তান হলো নাড়ি ছেঁড়া ধন। তিল তিল করে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন নিজ সন্তানকে।

লেখাপড়া করে ছেলে হয়েছিলেন শিক্ষক। অন্তিম মুহূর্তে বার বার সন্তানকে শেষ দেখা দেখতে চেয়ে খবর পাঠিয়েছেন মা। তবুও দেখতে আসেননি সেই সন্তান। মৃত্যুর পর সেই সন্তানেই আবার মরদেহ দাফনে বাধা দিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্ব খণ্ড এলাকায়।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে এমন ঘটনা ঘটে।  

উপজেলার কেওয়া পূর্ব খণ্ড এলাকার মৃত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম (৬৫) বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি মারা যান। গত এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি।

তার বড় ছেলে ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে সঙ্গে পুলিশ নিয়ে এসে মরদেহ দাফনে বাধা দেন। পরে দাফনে আসা স্থানীয় মুসল্লিদের হস্তক্ষেপে মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়। ইকবাল স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৪ সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বণ্টন নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইকবাল হোসেন তার মায়ের সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাকে একা জমি লিখে না দেওয়ায় তার মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় তার মা তার ছোট ভাইয়ের বাসায় উঠেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছোট ছেলেই তার দেখাশোনা করতেন।

ছোট ছেলে আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তিনিই তার মায়ের দেখাশোনা করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসার পর তার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের মরদেহ দাফনে বাধা দেন। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তারা দাফন সম্পন্ন করেন।

তিনি আরও বলেন, যে মা তাকে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করলেন, সেই মাকেই তিনি শেষবারের মতো দেখলেন না, কবরে একমুঠো মাটিও দিলেন না। সবাই যখন দাফনে ব্যস্ত, তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে রইলেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার ভাইকে দেখতে অনেক ডেকেছিলেন। তিনি তাতেও সারা দেননি।

এ বিষয়ে মৃতের ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন, তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই তার মাকে তার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারণায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছেন। তিনি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, সম্পদের জন্য এভাবে একটি সন্তান তার মায়ের মরদেহ দাফনে বাধা দেবে এটা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এলাকাবাসী হিসেবেও এমন কাণ্ডে লজ্জিত। সবচয়ে বড় কথা তিনি একজন শিক্ষিত ছেলে, একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এখানে তার শিক্ষাটা অন্তত পরাজিত হয়েছে।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও মৃত নারীর কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।