ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহাত্মা গান্ধী দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের জাতির পিতা। স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্ন দেখা দুই মহামানবের জন্মক্ষণের পার্থক্য প্রায় অর্ধশতাব্দির।
চমৎকার এ ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী। যেখানে এক ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে দুই মহামানবের সংগ্রামী জীবনকর্ম।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১৭ দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ।
প্রদর্শনালয়ের প্রবেশ মুখেই দুই মহামানবের আলোকচিত্র। যার ওপরে লেখা ‘জয় বাংলা’ ও ‘অহিংসা’। বঙ্গবন্ধু ও বাপুর এ দুই শব্দদ্বয়ে মন্ত্রিত হয় দুই দেশের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীটি ২২টি তথ্যদেয়াল এবং শতাধিক ডিজিটাল মুহূর্তের সমন্বয়ে তৈরি। প্রদর্শনী শুরু হয় পরিচিতি প্রাচীর দিয়ে। যেখানে যা প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুকে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের চোখে মহান দুই নেতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
পরবর্তী দুইটি দেয়াল দুই নেতার জীবনের একটি বিস্তৃত পটভূমি প্রদর্শন করে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে দুই নেতার সাক্ষাতের দিনটির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘মিটিং ওয়ালে’ প্রদর্শিত ছবিটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র ছবি যেখানে বঙ্গবন্ধু এবং বাপু উভয়ই এক ফ্রেমে রয়েছেন।
একটি হলোগ্রাফিক টাইম মেশিনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ছবিগুলোকে একটি সময়রেখার সঙ্গে সাজানো হয়েছে। এর ফলে দর্শনার্থীরা সময় এবং জীবনকাল সম্পর্কে বুঝতে পারেন। পরবর্তী অংশটি তাদের তারুণ্যের ঘটনাগুলো বর্ণনা করে যে সময়ে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন হয়েছিল।
পরবর্তী দেয়ালটি তাদের জীবনের তিনটি বিখ্যাত আন্দোলনকে প্রদর্শন করেছে। একটি হলো লবণ সত্যাগ্রহ, যেটিকে টাইম ম্যাগাজিন আধুনিক ইতিহাসের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে বিবেচনা করে। অন্যটি ৭ মার্চের ভাষণ, যেটি ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের একটি তালিকা।
মানুষের দুর্দশা, যন্ত্রণা এবং অবিচারের দৃশ্য জালিয়ানওয়ালাবাগ এবং বাংলাদেশের ২৫ মার্চের গণহত্যা সুড়ঙ্গের মধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৭১ সালের প্রাচীরে সেই বছরের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে সাজানো হয়েছে। শক্তি ব্যবহারের ন্যায্যতা এবং মুক্তিবাহিনী কর্তৃক প্রাপ্ত সাহায্য মানবতার নৈতিকভিত্তির দুইটি শেষ প্রান্ত।
ব্যস্তবতার ত্রিভুজটি দুর্দশা এবং যন্ত্রণা থেকে চোখকে অতি প্রয়োজনীয় স্বস্তি দিতে, যেখানে ৩৬০ ডিগ্রি অবস্থানগুলোর মাধ্যমে অনুভব করা যায়। একটি রোবোটিক স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে। সঙ্গে দুই নেতার প্রিয় সঙ্গীতও রাখা হয়েছে।
বাপুর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী, যাকে ‘বা’ বলে অভিহিত করা হয় তাকে এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেসাকে উৎসর্গ করেও নির্মিত হয়েছে একটি দেয়াল। এ দুই নারী তাদের সঙ্গীদের পাশে দাঁড়িয়ে সব সময়ই উৎসাহ জুগিয়েছেন।
দুই মহান নেতা তাদের দেশ ও জনগণের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পরবর্তী অংশে প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রদর্শনীটির শেষ অংশে চলমান মহামারি বিষয়ে একটি সামাজিক বার্তা দেওয়া হয়। দর্শনার্থীদের একটি ইন্টারেক্টিভ দেয়ালে তারা যে তথ্য শিখেছে তা সংযুক্ত করার সুযোগ ছিল।
প্রদর্শনীর বিদায়ী অংশে দর্শনার্থী দুই নেতার সঙ্গে একটি ছবি ভুলতে পারেন এবং একটি ভিডিও প্রশংসাপত্র রেখে যেতে পারছেন।
বিরাদ ইয়াগনিকের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
ডিএন/আরআইএস