পঞ্চগড়: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে পরিবহন সেক্টর পরিচালনা ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছে সাধারণ সদস্যরা।
গত রোববার (১৯ সেপ্টম্বর) পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: নম্বর- রাজ: ২৬৪) সভাপতি মোশারফ হোসেনকে সংগঠনের কার্যালয়ে কিছু ক্ষিপ্ত সদস্য প্রায় ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে মারধরসহ জোরপূর্বক দুটি কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সভাপতির কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পরিবহন পরিচালনায় পঞ্চগড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। তবে যে দুইটি সংগঠন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নম্বর- রাজ: ২৬৪) ও পঞ্চগড় জেলা ট্রাক (মিনি ট্রাকসহ) ট্রাক্টর, ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নম্বর- রাজ- ২০০০) মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের বিরোধ। যার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।
জানা যায়, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে সভাপতিকে অবরুদ্ধ করে তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়। কিন্তু ক্ষিপ্ত সদস্যরা এ বিষয়ে সভাপতিকে আগে কোনো কিছু অবহিত বা হিসেবের জবাবদিহিতা করানো হয়নি। এতো বড় টাকার অংক আত্মসাতের বিষয়টি ক্ষিপ্ত সদস্যরা তাদের বিভাগীয় ফেডারেশন, জাতীয় কমিটির কেন্দ্র এমনকি শাখা কমিটির সদস্যদের কারো সঙ্গে আলোচনা না করে সভাপতির কাছ থেকে হিসাব-নিকাশ ছাড়া জোরপূর্বক পদত্যাগের নামে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সদস্যদের দাবি, যদি একটি সংগঠনের এতো টাকা বা টাকা আত্মসাৎ হয়েছে তাহলে আশপাশে থাকা আরও অনেক সংগঠনের এমন ঘটনা রয়েছে। বর্তমান যারা অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তুলেছে তারা কেউ ধোয়া তুলশি পাতা নয়। সভাপতি যদি ১০ টাকার অনিয়ম করেছে তাহলে সেখান থেকে ৫ টাকার ভাগ তারাও পেয়েছে। আর এতো টাকার আয়ের উৎস কোথায়, বৈধ নাকি অবৈধ? অজান্তে যদি এতটাকা আত্মসাৎ করতে পারে তাহলে এ সংগঠনে কতো কোটি টাকা আয় হয়েছে। যাই হোক আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি।
সেই হামলায় সংগঠনের সভাপতি মোশারফ হোসেন অসুস্থ হয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সভাপতির স্ত্রী লাবলি আক্তার লিজা বাংলানিউজকে বলেন, সেদিন রাতে হঠাৎ খবর পেলাম আমার স্বামীকে পঞ্চগড় বাস টার্মিনালের ২৬৪ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হচ্ছে। দ্রুত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা আমাকে স্বামীর কাছে যেতে দেয়নি, আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছে তারা। আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমার সন্তানদেরও তারা মারধর করেছে। দীর্ঘ আকুতি মিনতি করেও কোনো কথা না শুনে অলি, আবু ইসলাম, ওলিয়ার রহমান, মাজেদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবলু, নাগর, মঙ্গলু, আপেল, নুর আলম, মুন্নাসহ অজ্ঞাত ৩০-৪০ জন উল্টো আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। তখন আমি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পঞ্চগড় সদর থানায় যায়।
পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তারা কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না বলে জানায়। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ মোতায়েন করে রাত তিনটার সময় স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমার পরিবারের সদস্যরা জানমাল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বর্তমান আমার স্বামী অসুস্থ, চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে আমি ও আমার স্বামী আলাদা আলাদাভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে সংগঠনবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গত শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘১১/০২/২০১৮ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সংগঠনের সংবিধান লংঘন করে শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নম্বর- রাজ: ২০০০) সংগঠনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়া অত্র সংগঠনের রিট পিটিশন ৩৭১৪/২০১৪ হাইকোর্টের চলমান মামলাটি তিনি গোপনে টাকার বিনিময়ে আপোষ করেছেন এবং সংগঠনের ৪৭ লাখ টাকার কোনো হিসাব দিতে পারছেন না। ’
তবে অবরুদ্ধ ও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হামলা ও জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।
সংগঠনের সভাপতি মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি পদত্যাগ করিনি। পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ২৬৪ সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে তার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছি। গত রোববার সংগঠনের কার্যালয়ে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে মারধরের পর দুটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এসময় সহ-সাধারণ সম্পাদক আমজাদ আলী, কোষাধ্যক্ষ আইউব আলী, ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজু, সড়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান, সহ-সড়ক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মরিরুজ্জামান মুকুল, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি খয়রুল ইসলাম আমাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে নির্যাতন চালিয়েছে। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় ১১ ঘণ্টা আমি হামলাকারীদের বলেছি আমার কাছে কোনো হিসেব-নিকেশ পাওনা থাকলে এখানে বসে আমার কাছে হিসেব নিতে পারেন। কিন্তু তাদের অসৎ উদ্দেশ্য এবং সামনে আসন্ন নির্বাচনে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে এবং অর্থ আত্মসাতের যে বিষয়টি তারা দাবি করছে যদি সেটা সত্য হয় আমি গণমাধ্যম ও দুদকের মাধ্যমে সেই টাকার আয়ের উৎস এবং কোনো ব্যাংকে এ টাকা লেনদেন হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
মোশারফ হোসেন আরও জানান, করোনার সময়ে ১৮ মাস আমরা কর্মবিরতিতে ছিলাম এবং আমি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ ও জনগণের কথা বিবেচনা করে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় কোনদিন কোনো সদস্যকে মহাসড়ক অবরোধসহ সরকারবিরোধী কোনো দাবিতে রাজপথে দাঁড়াতে দেয়নি। কিন্তু এখানে জামায়াত, বিএনপির সমর্থকরা সেদিন আমার ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: নম্বর- রাজ-২০০০) সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি ২৬৪ এর সভাপতি ও সদস্যদের মধ্যে যে ঘটনা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। হঠাৎ সাড়ে ৩ বছর আগের একটি হিসেবকে নিয়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যা সৎ উদ্দেশ্যে করা হয় নি। তবে এর বিষয়ে আমি বেশি কিছু ফোনে বলতে চাচ্ছিনা।
জানা যায়, আগামী ৯ অক্টোবর ২৬৪ সংগঠনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সাধারণ সভায় মোশারফ হোসেন তার দায়িত্বরত বিগত দিনের হিসেব নিকেশ সকল সদস্যদের মথ্যে তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এনটি