ঢাকা: দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চলছে ‘উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো’ প্রকল্প। একাধিকবার সময়-ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বৈদেশিক ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রথমে প্রকল্পের কাজ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মে মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এর পরে মে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। নতুন করে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
শুরুতে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৭৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তবে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে ৯৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৪০৫ কোটি ও স্ট্র্যাটেজি ক্লাইমেট ঋণ দিচ্ছে ২৩৪ কোটি টাকা। পাশাপাশি স্ট্র্যাটেজি ক্লাইমেট ফান্ড ৮১ কোটি, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ১২ কোটি এবং আরবান ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ট্রাস্ট ফান্ড ৪৬ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান বাংলানিউজকে বলেন, মূলত করোনার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গতি কমেছে। ফলে প্রকল্পের সময় এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় কমছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের ২য় সংশোধন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত মহামারির কারণে কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আগাম বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সার্বিক কাজের অগ্রগতি ব্যহত হয়েছে। মঠবাড়িয়া বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকালে উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভার মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা, মঠবাড়িয়া ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যন্টের মূল নির্মাণ কাজ সম্পাদনের চুক্তি অনুযায়ী মূল কাজ সম্পাদনান্তে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কমপক্ষে ১ বছর সময়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ভোলা শহরের মধ্যস্থ খাল পুনঃখননের জন্য বিশেষায়িত কাজের প্রয়োজন হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এডিবির ২০ কোটি ডলার সহায়তা প্রতিশ্রুত সম্বলিত প্রস্তাবিত ২য় উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শকের সহায়তার জন্য বাড়তি সময় লাগবে। এসব কারণেই মূলত সময় লাগবে। প্রকল্পটি আমতলী, গলাচিপা, পিরোজপুর ও মঠবাড়ীয়া, বরগুনা, ভোলা, দৌলতখান ও কলাপাড়া, বাগেরহাট ও পটুয়াখালী পৌরসভায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় পৌরসভার জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণুতা ও দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি শক্তিশালী করা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে একটি সামগ্রিক ও সমন্বিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু শহর অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, স্থানীয় পরিচালন ব্যবস্থা জোরদার করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অন্যতম উদ্দেশ্য। পৌরসভাগুলোর পরিকল্পিত ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করাও অন্যতম উদ্দেশ্য।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমানো সহশ্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়নে যে সাফল্য অর্জন করেছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তা বজায় রাখা হমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকার শহরগুলোর বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্রমাগত লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ, আর্সেনিকযুক্ত পানি, অপ্রতুল পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণে সুপেয় পানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে। তাছাড়া নিরাপদ ও ব্যবহারপযোগী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের স্বল্পতা থাকায় উপকূলীয় শহর এলাকার জনসাধারণকে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করতে পারে এমন অবকাঠামো যেমন- রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
এমআইএস/এজে