ঢাকা: জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। দেশের একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, তার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে (ডিএনসিসি) আয়োজিত ‘স্বপ্নের রূপকার’ অনুষ্ঠানে জুমে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য নয় লাখ ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। এ প্রকল্পটি পৃথিবীতে এক অনন্য প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, তার ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন।
তিনি বলেন, আমরা গর্বিত যে প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন নেতৃত্ব আমাদের আছে। তার নেতৃত্বের কারণেই এত দূর এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তিনি চার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়েই তিনি এ দায়িত্বে এসেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তার বাবার দর্শনকে বিশ্বাস করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা প্রথমবার বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন। তখন তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি থেকে শুরু করে গঙ্গার পানি চুক্তি এবং বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার কারণে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিখাতে তিনি পানি সেচ, সার ও বীজের বিষয়ে অনন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, যার প্রতিফলন আজ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরেই দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের দুটো দিকে সমন্বয় করে আমাদের এক জায়গায় আনতে হবে উল্লেখ করে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, একটি দিক হচ্ছে, তার সংগ্রামী জীবন। অনেক কঠিন পথ তাকে পাড়ি দিয়ে আজকের এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। সেটি একটি বড় অধ্যায়। আরেকটি দিক হচ্ছে, সেই দুর্গম পথ, যত বড়ই হোক না কেন তা পাড়ি দেওয়া। প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে তিনি জয় এবং সফলতা অর্জন করতে পারেন এবং এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারেন, এই লক্ষ্যকে তিনি সব সময় সামনে রেখেছেন এবং বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের একটু আগের অধ্যায়ে যদি যাই, টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করায় এই মেয়েটি একটি রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যেই বড় হয়েছে। ১৯৪৭ সালের তার জন্ম সে সময় থেকেই তিনি আন্দোলন সংগ্রাম এবং উত্তাল পরিবেশ দেখে বেড়ে উঠেছেন। সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সব আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেরকম একটি রাজনৈতিক পরিবারের আদরে বেড়ে উঠেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিবও অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী ছিলেন। কাজেই বাংলার মানুষের সঙ্গে তার পরিবারের একটা নিবিড় সম্পর্ক, সেটা কিন্তু ছোটবেলা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখে এসেছেন। তাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের যে বাড়িটি রয়েছে সেটা যতখানি তাদের ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল দেশের মানুষের বাড়ি। সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক শিক্ষা এবং বেড়ে ওঠা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসতে পারেননি। তৎকালীন সরকার তাদের ফিরে আসতে দেয়নি। তারপরও সব সময় একটা জিনিস তারা মনে লালন করেছেন, ধারণ করেছেন, কবে তারা দেশে ফিরতে পারবেন। সে ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালে তারা দেশে ফিরে আসেন। তখন থেকেই শুরু হয় তার দুর্গম পথ চলা। যেখানে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তিনি সংগ্রাম শুরু করেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশে স্বল্পোন্নত দেশ নয়। তার থেকে বেরিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের পথে পা বাড়িয়েছি। ২১০০ শতাব্দীতে বাংলাদেশকে বিশ্বের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে ডেল্টা প্ল্যান করা হয়েছে সেটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই করা হয়েছে।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সংসদ সদস্য (এমপি) শবনম জাহান শিলা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে শিশুদের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নকর্মীদের ৭৫ জন শিশু অংশ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস