ঢাকা: দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণদের ৮০ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) ও বিষণ্নতার মতো অসংক্রামক রোগে ভুগছেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দেশজুড়ে ২ হাজার ৭৯৫ প্রবীণকে নমুনা হিসেবে নিয়ে তাদের ওপর জরিপ চালিয়েছে আইসিডিডিআরবি।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১ উপলক্ষে এক ওয়েবিনারে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের চিত্র পাওয়া গেছে। যেখানে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জন (৮০ শতাংশ) অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। যা উদ্বেগজনক।
ড. আলিয়া বলেন, এদের প্রতি ২ জনের মধ্যে একজন একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে পুরুষদের (৩৭ শতাংশ) চেয়ে নারীদের সংখ্যা (৫৪ শতাংশ) বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ মাসে প্রবীণ ব্যক্তিদের ৩৫ শতাংশ কাছের ওষুধ বিক্রেতার কাছে, ৩৬ শতাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে এবং ১৭ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য উৎস থেকে সেবা নিয়েছেন।
গত ছয় মাসে স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রবীণদের মাথাপিছু গড় খরচ ছিল ২ হাজার ৪২৯ টাকা। এ প্রবীণদের ৩০ শতাংশ এখনো নিজেরা আয় করেন, যা থেকে তারা চিকিৎসার খরচ যোগান। নিজেরা আয় করেন না এমন পাঁচ জনের চার জন চিকিৎসা খরচের জন্য সন্তানদের আয় কিংবা নিজস্ব সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীল।
জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সরকারি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা পান বলে জানিয়েছেন।
আইসিডিডিআরবির ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ড. আলিয়া বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবীণ ছিল। এ সংখ্যা ২০৪১ সালে দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এজন্য স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা তাদের দোরগোড়ায় নেওয়া উচিত। সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, অসংক্রামক রোগ এবং যেসব রোগ প্রবীণদের মাঝে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সেসব মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা এবং সহযোগিতামূলক কাজ করতে হবে।
ওয়েবিনারে অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও রেসপাইরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. লোচানা শ্রেষ্ঠা, নেপালের পাটান একাডেমির ইমার্জেন্সি মেডিসিনের প্রভাষক ডা. সুনীল অধিকারী, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর অধ্যাপক ট্রুডি লাং অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২১
এমএমআই/এনএইচআর