ঢাকা: বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবেন সায়রা মাহবুব। প্রতি বার বাসে ভ্রমণ করলেও এবার কি মনে হয়েছে, যাচ্ছেন ট্রেনে।
কিছু সময় পর তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, একটা তথ্য খুঁজতে হয়রানির যেন শেষ নেই। রাজধানীর সব থেকে বড় রেলস্টেশন, দেশের প্রধান স্টেশনগুলোর অন্যতম একটি, অথচ এখানে ঠিকমতো স্টেশনের সিডিউল বোর্ড নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলো হয় নষ্ট অথবা বিজ্ঞাপন চলছে। দুই-একটা যা চালু আছে, সেখানে অনেক ভিড়। করোনার ভেতর এটা সত্যিই মানা যায় না।
কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার সিডিউল বোর্ডের সামেন প্রকৃতপক্ষেই অনেক বেশি মানুষের ভিড়। করোনা পরিস্থিতির ভেতরও নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। কারণ খুঁজলে বের হয়ে আসে- স্টেশনের ছয়টি সিডিউল বোর্ডেরে মধ্যে চারটিই বন্ধ। চালু রয়েছে মাত্র দুটি। তাই সেখানেই তথ্যের জন্য সবার ভিড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মগুলোর সামনে ওপরের দিকে সিডিউল বোর্ড হিসেবে ছয়টি মনিটর থাকলেও বন্ধ চারটি। এছাড়া বিকল হয়ে পড়ে আছে অনেক ডিসপ্লে বোর্ডও। ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ডিসপ্লে বোর্ড যেমন কাজ করে না, তেমনি কাজ করে না এখানে থাকা সিডিউল বোর্ডটিও। ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শুরুতে দুটি সিডিউল বোর্ড থাকলেও কাজ করে মাত্র একটি। নষ্ট হয়ে আছে ৫ নম্বর প্লাটফর্মের ডিসপ্লে বোর্ড।
এছাড়া ২ নম্বর এবং ৩ নম্বর প্লাটফর্মে কোনো সিডিউল বোর্ড নেই। ১ নম্বর প্লাটফর্মের ওপর দুটি সিডিউল বোর্ড থাকলেও চালু আছে একটি। আর প্লাটফর্ম-১ এবং ২ এর মাঝামাঝি পুলিশ তথ্যকেন্দ্রের মাথার ওপর একটি সিডিউল বোর্ড থাকলেও তা নষ্ট। অনেক সময় পুলিশ তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
এ বিষয়ে হায়দার আলী নামে এক যাত্রী বলেন, স্টেশনের সিডিউল বোর্ড, ডিসপ্লে বোর্ড তো বিকল, সেখান থেকে তো কোনো তথ্যই যেন পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় পুলিশ তথ্য কেন্দ্রে গেলেও তারা সঠিক তথ্যটা দিতে পারে না। এতে ভোগান্তি হয় সাধারণ যাত্রীদের। সরকার যখন রেল ভ্রমণে সবাইকে উৎসাহিত করছে, আমরা যখন আসছি, তখন এসব অব্যবস্থাপনার কারণেই আবার ট্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে।
দেলোয়ার হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, এটা ঠিক যে করোনার কারণে অনেকদিন স্টেশন বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন তো সব চলছে। অথচ স্টেশন দেখে মনে হয় এখনো যেন সব পরিত্যক্ত হয়ে আছে। সিডিউল বোর্ড, ডিসপ্লে বোর্ডগুলো যেমন বিকল, তেমনি ময়লা জমে আছে প্লাটফর্ম আর দেওয়ালে। এগুলো তো কর্তৃপক্ষের ঠিক করা উচিত। অন্তত এখন করোনার সময়, আর সেজন্য তো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আরও বেশি নজরে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে সিডিউল বোর্ডের কাছে যেতেই ভয় করে, সেখানে এতো মানুষ ভিড়!
তবে সিডিউল বোর্ড বিকল হয়ে পড়ে থাকলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. আফসার উদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রেলের পক্ষ থেকে কিছু করার নাই!
তিনি জানান, যাত্রীদের সুবিধায় সিডিউল বোর্ডগুলো মূলত স্থাপন করেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্দেশ্য সিডিউল দেখানোর পাশাপাশি তারা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করবে। তবে সেই শর্তে রাজি নয় রেল কর্তৃপক্ষ। তাই তারাও আর এগুলো মেরামতের জন্য এগিয়ে আসেনি।
এদিকে স্টেশন এবং প্লাটফর্মে সিডিউল বোর্ডের থেকেও বড় কয়েকটি পর্দায় বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখা গেছে। আর অনেক সময় সিডিউল বোর্ডের জন্য ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। সিডিউল বোর্ডগুলো ঠিকমতো কাজ না করায় যাত্রীরা তথ্য কীভাবে জানতে পারবে বা কোনো ট্রেন লেট হলে সেটি যাত্রীরা কীভাবে জানছে তা জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এভাবেই জানছে!' তারপর আবার যোগ করেন- 'টিকিটে সম্ভাব্য টাইম দেওয়া থাকে এবং মাইকে অ্যানাউন্স করা হয়। বোর্ডগুলো রেলের নিজস্ব নয়। রেলের পক্ষ থেকে কিছু নাই। '
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
এইচএমএস/এসআইএস