কুষ্টিয়া: ১১৬ বছর বেঁচে ছিলেন মরমী সাধক ফকির লালন সাঁই। মৃত্যু হয়েছে ১৩১ বছর আগে।
রোববার (১৭ অক্টোবর) অর্থাৎ ১ কার্তিক, এই মরমী সাধকের ১৩১তম তিরোধান দিবস। এ দিনে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজারও ভক্ত, অনুরাগী আর দর্শনার্থী ছুটে আসেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায়, লালনের আখড়াবাড়িতে। প্রতি বছর এ সময় কালিন্দী নদীর ধারে লালন ভক্ত-সাধকদের মিলনমেলা বসে। হয় সাধুসঙ্গ, বাউল গান ও লালন মেলা। তবে এ বছরও করোনা সংক্রমণ রোধে হচ্ছে না সেই অনুষ্ঠান। তারপরেও ভক্ত, অনুসারীরা অনেকে ভক্তি জানাতে উপস্থিত হয়েছেন লালন সাঁইয়ের মাজারে।
এর আগে শনিবার (১৬ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম তার সম্মেলন কক্ষে তিরোধান দিবস পালন না করার ঘোষণা দেন। করোনার কারণে এখনও গণজমায়েতের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি নিষেধ আরোপ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশ ও লালন একাডেমির সিদ্ধান্তে তিরোধান দিবসের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করায় হতাশ লালন ভক্ত ও অনুসারীরা। এ অনুষ্ঠান ঘিরে তারা আগেই ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির ধামে অবস্থান নিয়েছিলেন। ভক্তানুরাগীরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত সাধুসঙ্গের অনুমতি দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের।
দৌলতপুর থেকে আসা লালন অনুসারী ফকির আমান শাহ বলেন, ‘করোনার কারণে এবারও লালন সাঁইজির স্মরণোৎসব বন্ধ। করোনার জন্য তো কোনো কিছু থেমে নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই না হয় আমরা অনুষ্ঠানটি করতাম। বছরে দুই বার আমরা সাঁইজির ধামে এসে আমাদের আত্মার শুদ্ধি করি। বাউল সাধকদের কথা শুনি। তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ’
ফকির ইদবার আলী বলেন, ‘ছোট আয়োজনে হলেও সাধুসঙ্গ করা যেত। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। তারা তো জানে না স্মরণোৎসব বন্ধ করা হবে। এখন অশ্রুজলে ফিরে যেতে হচ্ছে সবাইকে। ’
লালন মাজারের প্রধান খাদেম মশিউর রহমান রিপন বলেন, ১৩১ বছর আগে ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক দেহত্যাগ করেন ফকির লালন সাঁই। সেই থেকে তার ভক্ত, অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ ও বাউল মেলার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গতবছর থেকে সেই রেওয়াজ ভাঙতে হচ্ছে।
লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, তিরোধান দিবস উপলক্ষে আখড়াবাড়িতে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে। তাই করোনার বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২১
এনএসআর