বরিশাল: বরিশাল নদী বন্দরে ঘাট পার হওয়ার সময় কথিত চাঁদাবাজদের হাতে জাকারিয়া ইমতিয়াজ নামে এক সরকারি চাকরিজীবী হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জাকারিয়া ইমতিয়াজ জানান, গত ১০ অক্টোবর ভোরে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বরিশালে আসেন তিনি। লঞ্চ থেকে নামার সময় তার হাতে আরবিতে লেখা একটি প্যাকেট ছিল। এতে একটি কম্বল, একটি ডিনারসেট ও কিছু খেজুর ছিল। যার ওজন ১৫ কেজির মতো।
তিনি বলেন, নদী বন্দরের গেট পার হতে চাইলে কিছু লোক আমাকে বাধা দেয় এবং হাতের প্যাকেটটির জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে। তখন কিসের জন্য এ টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে, তারা জানান, ঘাট পাড় হতে টাকা দিতে হবে। আবার তাদের কাছে রশিদ দেখতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পোর্ট অফিসারের কাছে গিয়ে রশিদ চাইতে বলেন। এ সময় তাদের কর্মকাণ্ড মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলাম। এতে তারা আমার শার্টের কলার ধরায় পুরো ঘটনা ভিডিও করতে পারিনি। পরে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের সহযোগিতায় ৫০ টাকা দিয়ে ঘাট পাড় হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ভিডিওটি কোথাও প্রকাশ করলে তারা আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন। পরে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওসহ তুলি ধরি।
জাকারিয়া ইমতিয়াজ বলেন, শুধু এবারই নয় এরআগেও বরিশাল নদী বন্দরে আমার সঙ্গে এমন ঘটনা হয়েছে। পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় নিজেরসহ সহপাঠীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বই ঢাকা থেকে কিনে আনতাম। এতে আমার যাতায়াত খরচাটা বেঁচে যেত। কিন্তু সেই বই বরিশালে আনতে গিয়ে নদী বন্দরেই সাড়ে ৭০০ টাকা ফি দিতে হয়েছিল। সেবারও দেড় হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল আমার কাছে।
তিনি বলেন, কোনো দুর্নীতির সঙ্গে আপস করিনি কখনো। সরকারের কোষাগারে যদি টাকা জমা হয় তবে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেই টাকা জমা দিতে হলে তো রশিদ ও নির্ধারিত চার্টও থাকবে। এভাবে হেনস্তা, লাঞ্ছিত ও জোর করে টাকা নেওয়ার দরকার কি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৫ কেজি মালামালের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শুল্ক দিয়ে সরকার নির্ধারিত ঘাট ফি ১০ থেকে ১৫ টাকা। যদি ৫০ টাকা রাখা হয় তাহলে বেশি রাখা হয়েছে।
এদিকে ভিডিও দেখে লেবার সাপ্লাইয়ার ও মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস জানান, বিষয়টি কেউ তাকে অবগত করেনি। অবগত করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তবে এখন যেহেতু বিষয়টি তিনি জেনেছেন, তাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত খোকন ও আরিফ নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভবিষ্যতে যাতে কোনো যাত্রীকে ঘাটে হয়রানির শিকার হতে না হয় সেদিকেও তিনি লক্ষ্য রাখবেন বলেও জানান পরিমল চন্দ্র।
এ বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা (যুগ্ম পরিচালক) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আগে আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হতো। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
দোতলা ঘাটে বর্তমানে ইজারাদার নেই জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামীতে যারা ঘাট ইজারা নেবেন তাদেরও সতর্ক করে দেওয়া হবে। যাতে যাত্রীরা কোনো ভাবেই হয়রানি না হয়। এছাড়া চার্ট নির্ধারিত টাকার বাহিরে কোনো ধরনের টাকা আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এদিকে শুধু মালামাল বহন নয়, তিন নম্বর গেট দিয়ে ঘাটে প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকিট কাটা নিয়েও যাত্রীদের লাঞ্ছিত হতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২১
এমএস/আরআইএস