খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামে মা-বাবা ও মেয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। স্বজনরা শোকে মূহ্যমান।
বামিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ গাজী ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবুল্লাহ (৩৩), তার স্ত্রী বিউটি খাতুন (২৫) ও মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী হাবিবুন্নাহার টুনির (১৩) মরদেহ পুকুর থেকে উদ্ধারের পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত ঘটনার কারণ খুঁজতে হন্যে হয়ে ছুঁটছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সিআইডি, ডিবি, পিবিআই, র্যাবসহ থানা পুলিশের একাধিক টিম এ খুনের নেপথ্য কারণ ও খুনিদের গ্রেফতারে কাজ করছেন। কিন্তু হত্যার নেপথ্য ক্লু এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসী বলছেন, আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না কী কারণে একটা দরিদ্র পরিবারের খেটে খাওয়া যুবক, তার স্ত্রী ও মেয়েকে এভাবে হত্যা করা হলো? পেশাদার খুনি না হলে একটা পরিবারকে এভাবে খুন করা সম্ভব নয়।
তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যার পর মরদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাবিবুল্লাহ ও টুনির মাথায়, মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাবিবুল্লাহর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। তবে বিউটি খাতুনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই দিন সকালে পুকুরে পানি আনতে গিয়ে এক মহিলা মরদেহগুলো দেখতে পান। পানিতে হাবিবুল্লাহ খালি গায়ে লুঙ্গি পরা উপুড় অবস্থায়, তার স্ত্রীর পরনে ব্লাউজ, পেটিকোট আর মেয়ের গায়ে সালোয়ার-কামিজ ছিল। তাদের ঘর থেকে মাত্র ১০-১২ ফুট দূরে পুকুরঘাটের অবস্থান। ওই বাড়িতে ওরা তিন জনই থাকতো। আর কেউ ছিল না।
পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যার পর মরদেহ গুম করতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, রাতের বেলায় প্রতিবেশীরা কোনো ধরনের চিৎকার বা এ ধরনের শব্দ শুনতে পাননি। ঘরের মালামালও উলোটপালোট করা ছিল না। নিহত হাবিবুরের প্রতিবেশী কুদ্দুস গাজীর স্ত্রী সুলতানার সাথে এলাকার একাধিক যুবকের পরকীয়ার বিষয় জানার পর হাবিবুর প্রতিবাদ করে এবং লোকজনকে জানায়। ৩/৪ মাস আগে হাবিবুর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার সময় মুখোশধারী কিছু যুবক তাকে মারপিট করে এবং একই সময় গৃহবধু সুলতানা বেগম বোটি দিয়ে হাবিবুরের পিঠে কোপ মারে। অতঃপর গ্রাম্য শালিশে বিষয়টি মিমাংশা হয়। পরকীয়ার সাথে জড়িতরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে অনেকের ধারনা।
এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই হাবিবুরের মনিরুল ইসলাম বুধবার সকালে বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ব পরিচিত কেউ হয়তো তাদের হত্যা করেছে। পুকুরের পশ্চিম পাশে ঘাটের কাছে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। কিভাবে কী হলো বুঝে উঠতে পারছি না। ঘরের দরজা খোলা ছিল। কোথাও রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি।
ভাইয়ের কোন শত্রু ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কোনো শত্রু ছিল না। তবে তার একটি ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। ৩-৪ মাস আগে কুদ্দুস গাজীর স্ত্রী সুলতানার পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে ওদের সাথে হাবিবুরের একটি বিরোধ হয়। ওরা তাকে মারপিট ও কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া আর তেমন কোনো শত্রু তো দেখছি না। আমাদের মা এমনিতে অসুস্থ ছিলেন। এখন আরও ভেঙে পড়েছেন।
প্রশাসনের কাছে যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
কয়রা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নিহত হাবিবুর রহমানের মা কোহিনুর খানম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকান্ড কি কারণে সংঘটিত হয়েছে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা তার রহস্য উৎঘাটনে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য ৪ জনকে পুলিশ হেফজতে রাখা হয়েছে।
ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যের কারণ জানা গেছে কিনা জানতে চাইলে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চলছে। যা কিছু জানা গেছে তা এখনই বলা ঠিক হবে না। শেষ পর্যন্ত যেয়ে আমরা প্রকাশ করবো। নিহতদের ময়না তদন্তের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২১
এমআরএম/এজে