ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছড়িয়ে পড়ছে ‘অচেনা জন্তুর’ আতঙ্ক

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
ছড়িয়ে পড়ছে ‘অচেনা জন্তুর’ আতঙ্ক ‘অচেনা জন্তু’র ভয়ে লাঠি হাতে ক্ষেতে। ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ছড়িয়ে পড়ছে সেই 'অচেনা জন্তুর' বিচরণ। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে হামলার ঘটনা অন্যদিকে বাড়ছে আতঙ্ক।

ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
 
শুরুতে উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুকজামিরা গ্রামে 'অচেনা জন্তুটির' দেখা এবং আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও ছড়িয়ে পড়ছে পাশের গ্রাম ও এলাকায়।
 
গ্রামগুলো হলো- ওই ইউনিয়নের তালুক কেওয়াবাড়ি, হরিনাথপুর, কিশামত কেওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া ও দুলালেরভিটা।
 

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত গেল চারদিনে নতুন করে আক্রমণের শিকার হয়েছেন আরও তিনজন। তারা হলেন- কিশামত কেওয়াবাড়ি গ্রামের আফসার আলী (৫০), খামার বালুয়া গ্রামের আব্দুল হালিম (৪৫) এবং দুলালেরভিটা গ্রামের ছাব্বির শেখ (৫২)।  

মাঠে কৃষিকাজ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তারা। এরপর থেকে কৃষকরা মাঠে কাজে যেতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
 
এর আগে আক্রান্তদের মধ্যে আমিরুল, হামিদ মিয়া, আফছার আলী, সুমি বেগম, মনজিলা বেগম, পারভীন বেগম, শেফালি বেগম, মুক্তা বেগমের নাম জানা গেলেও এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২০ জন ছাড়িয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
 
আক্রান্তদের ভাষ্যমতে, প্রাণীটি দেখতে কুকুর কিংবা শিয়ালের মতো। মাথা ও লেজ আকারে বড়। শরীরে রয়েছে ডোরাকাটা দাগ। শক্তিশালী জন্তুটির রয়েছে প্রচণ্ড লাফানোর সক্ষমতা। এক লাফে পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের ঘাড়ে উঠে নাকে-মুখে কামড় দেয়।
 

সুযোগ পেলেই এলাকার ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করছে জন্তুটি। হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় বসিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন হামলার ঘটনা।
 
শনিবার (৩০ অক্টোবর) ওইসব গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলেও কয়েকজন লাঠি হাতে বের হচ্ছেন। দুপুর গড়াতেই এলাকা লোকশূন্য হয়ে পড়ছে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছেন না তারা। কার্যত থমকে গেছে এলাকার জন-জীবন।
 
হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. রুবেল মিয়া জানান, ঘটনার শুরু দেড় মাস আগে। মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে 'অচেনা জন্তুর' আক্রমণের শিকার হন তালুক জামিরা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৬)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
একই দিনে আরও তিনজন আক্রমণের শিকার হন। এরপর থেকে ঘটছে একের পর এক আক্রমণের ঘটনা। বর্তমানে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই জন্তুটির বিচরণ ও আক্রমণের ঘটনা।
 
তালুকজামিরা গ্রামের বাসিন্দা রাণী বেগম জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও এই জন্তুর আক্রমণের ভয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠানোসম্ভব হচ্ছে না।  
 
তিনি আরও জানান, আমন মৌসুম চলছে। মাঠে ব্যস্ততা থাকলেও কৃষকরা আতঙ্কে মাঠে যেতে পারছেন না। গেলেও দুপুর গড়ালেই বাড়ি ফিরে আসছেন।
 

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ওই সব গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এছাড়া  আতঙ্ক কাটাতে গ্রামে-গ্রামে পুলিশ টহল দিচ্ছে।
 
সংশ্লিষ্ট হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন জানান, এটা মেছবাঘ কিংবা শিয়াল হতে পারে। তালুকজামিরাসহ অন্যান্য গ্রামে গিয়ে টহলসহ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
 
পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাব হোসেন জানান, যেটাকে 'অচেনা জন্তু' বলা হচ্ছে, সেটি মূলত পাগল শিয়াল বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিয়াল যখন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তারা মানুষ ও যেকোনো প্রাণীকে কামড়ায়। ফলশ্রুতিতে তারাও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে।
সে কারণে মানুষ বা গবাদিপশু যেই আক্রমণে শিকার হচ্ছে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দিতে হবে।  
 
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, প্রাথমিকভাবে জন্তুটি পাগল শিয়াল বলে ধারণা করা হলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আক্রান্তদের সরকারি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

** পলাশবাড়ীতে ‘অচেনা জন্তুর’ আক্রমণে দিশেহারা মানুষ!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।