ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে বাস-ট্রাক ধর্মঘট শুরু করেছে বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতি। রোববার (৭ নভেম্বর) পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
শনিবার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব সেভাবে আসেনি। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন রোববার বেলা ১১টার দিকে আলোচনায় বসব। সেখানে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। এই মিটিং চলা পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।
বাস ভাড়া বৃদ্ধির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমবে-এমন কোনো আভাস আমরা এখনও পাইনি। বৈঠকে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জ্বালানি তেলের দাম কমানো না হলে পরিবহনের ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেকাংশে। সে বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতি ভাবতে শুরু করেছে।
যাত্রীরা বলছেন, যদি তেলের দাম না কমে এবং গণপরিবহণের ভাড়া বাড়ানো হয়, তবে সাধারণ মানুষের ওপরই এর প্রভাব বেশি পড়বে।
তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। যদি ভাড়া বেড়ে যায়, তবে চলাচলে নাজেহাল হবেন যাত্রীরা। প্রতিদিনই ভাড়া নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হবে পরিবহণ শ্রমিকদের সঙ্গে।
পরিবহন মালিক সমিতির একাধিক নেতারা বলছেন, সরকার যদি জ্বালানি তেলের দাম না কমায় তবে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া আর কোনো গতি থাকছে না। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সব সংগঠনে আলোচনা চলছে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্র বলছে, রোববার বেলা ১১টার দিকে এ বিষয় নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেখানেই হয়তো ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
পরিবহণ শ্রকিমরা বলছেন, ভাড়া বাড়ানো হলে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলার সৃষ্টি হবে। কারণ অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে সবারই কষ্ট হবে। এতে করে প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হবে।
শনিবার রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর কামারপাড়া মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহণের টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় পার করছেন চালক ও হেলপারসহ পরিবহণ শ্রমিকরা।
মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক মো. সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ডিজেল লিটার প্রতি লিটার ৬৫ টাকা দরে নিতাম। চার সিঙ্গেল ট্রিপ মারতে ৪০ লিটার ডিজেল তেল দরকার হতো। সব মিলিয়ে চারটি ট্রিপে ২ হাজার ৬০০ টাকার তেল লাগত। কিন্তু প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় ডিজেলের দাম পরে ৮০ টাকা লিটার। এতে ৪০ লিটার তেলের জন্য খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। ৪ সিঙ্গেল ট্রিপে ৬০০ টাকা বেশি। এই বাড়তি খরচ তুলতে হলে ভাড়া বাড়াতে হবে, নয়তো প্রতি গাড়িতে ৬০০ টাকা লোকসান হবে।
মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের সুপার ভাইজার মো. সুমন বাংলানিউজকে বলেন, করোনায় আমাদের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। সেই সময় পরিবহনে লোকসান হয়েছে। এরপর পরিবহণ চালু হলে লোকসান কাটিয়ে ওঠার সময় এলো। কিন্তু সরকার আবার জ্বালানি তেলের তাম বাড়িয়ে দিলো। শুক্রবার থেকে আগামী রোববার বাসসহ সব পরিবহণ বন্ধ। এখন তিনদিন গাড়ি বন্ধ থাকায় আবার লোকসান। আমরা তো লোকসানের মধ্যেই আছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২১
এসজেএ/জেএইচটি