ঢাকা: দুবাই ফেরত নাইম খান ওরফে লোটাস একপর্যায়ে শুরু করেন চাকরির প্রলোভনে মানবপাচার। দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ থাকলেও কাজের প্রলোভনে ভ্রমণ ভিসায় অন্তত ৫ শতাধিক মানুষকে দুবাই পাঠিয়েছেন তিনি।
বিদেশগামীদের কেউ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বিএমইটি কার্ড চাইলে তাদেরকে সরবরাহ করা হতো নকল কার্ড। মানবপাচারের অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে চালু করেছেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নিয়েছেন রেসিডেন্স ভিসার অনুমোদন।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) রাত থেকে শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই মানবপাচার চক্রের ৮ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩।
আটকরা হলেন- নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১), নুরে আলম শাহরিয়ার (৩২), রিমন সরকার (২৫), গোলাম মোস্তফা সুমন (৪০), বদরুল ইসলাম (৩৭), খোরশেদ আলম (২৮), সোহেল (২৭) ও হাবিব (৩৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট ও নকল বিএমইটি কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি প্রিন্টার, ১টি স্ক্যানার, ২ বক্স খালি কার্ড, ৫টি মোবাইলফোন, ১টি চেক বই ও ৫টি নকল সিল জব্দ করা হয়।
শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।
তিনি বলেন, চক্রটি ভ্রমণ ভিসায় দুবাইয়ে কয়েকজনকে পাঠাতে চেয়েছিল। তারা বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং টাকা ফেরত চান। তখন চক্রটি নকল বিএমইটি কার্ড তৈরি করে ভিক্টিমদের সরবরাহ করে। নকল কার্ডগুলো বিমানবন্দরে শনাক্ত হলে তাদের বিদেশ যাত্রা স্থগিত হয়।
তখন ভিক্টিমরা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। পরে চক্রটি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকা থেকে আট জনকে আটক করা হয়।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছে, নাইম খান ওরফে লোটাস চক্রের মূল হোতা। তিনি ২০২১ সালে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দুবাই যান। পরবর্তীতে দুবাই সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেশটির শ্রম বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় সেখানে অবস্থানকারীদের ওয়ার্কপারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লোটাস মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে। সে দুবাই এবং বাংলাদেশে পরিচিতজনদের মাধ্যমে ভিক্টিমদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই যেতে প্রলুব্ধ করে। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই-তিন লাখ টাকা নিয়ে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠাতেন। ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবে তিনি গত ৭ বছর ধরে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে দুবাই পাচার করেছেন।
মানবপাচারের সেই অবৈধ উপার্জন দিয়ে লোটাস দুবাইয়ে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন এবং নিজে রেসিডেন্স ভিসার অনুমোদন নেন বলেও জানান লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।
এছাড়া, দুবাইয়ে ফারুক নামে তার একজন সহকারী রয়েছে এবং আটক নুরে আলম শাহরিয়ার বাংলাদেশে তার মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। শাহরিয়ার ভিক্টিমদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দিতেন। সম্প্রতি কিছু ভিক্টিম বিএমইটি কার্ড ছাড়া বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রটিও মানবপাচার চক্রে জড়িত হয়।
বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হাবিব ও খোরশেদ। তারা দীর্ঘদিন ধরে নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে আসছিলেন। চক্রটি বিএমইটি কার্ড স্ক্যান করে নিজেরাই গ্রাফিক্স তৈরি করে ভিক্টিমের পাসপোর্টে দেয়া তথ্য অনুযায়ী নকল কার্ড তৈরি করতো।
বাংলদেশ সময়: ১৫২৫ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
পিএম/এমএমজেড