ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীর পথে পথে সীমাহীন দুর্ভোগ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২১
রাজশাহীর পথে পথে সীমাহীন দুর্ভোগ ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে রাজশাহীতে নাকাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার (৭ নভেম্বর) অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা।

কিন্তু ছুটিতে রাজশাহী গিয়ে অনেকেই আটকা পড়েছেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও টিকিট নেই। এর ওপর রোববার সকালে সাপ্তাহিক বন্ধের কারণে আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি।

টানা তিনদিন রাজশাহী থেকে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক-কভার্ডভ্যানও চলছেন না। সব মিলিয়ে রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শহর, জেলা ও উপজেলার সড়কে বেড়েছে জ্বালানি বিহীন যানবাহনের চলাচল। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে চলে গেছে পুরো রাজশাহী। গন্তব্যে পৌঁছাতে ইচ্ছেমত ভাড়া হাঁকছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা বেশি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। তাই পথে পথে চোখে পড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে চলা পরিবহন ধর্মঘটে মূলত অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী। সকাল থেকে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যানবাহন না পেয়ে কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গেলেও অনেকেই বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন। এতে করে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। এই সুযোগে সড়কে আটোরিকশা ও সিএনজি চালকরা বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন।

রাজশাহী মহানগরীর শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর, গোরহাঙ্গা রেলগেট ও শিরোইলে থাকা ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- অনেক মানুষ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রাজশাহী থেকে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ আশপাশের জেলার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। দূরের জেলাগুলোর জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করছেন আর কাছের জেলাগুলোর জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটেছেন। তবে সবাইকে এরজন্য দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, সাধারণ সময়ে রাজশাহী থেকে পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাসের ভাড়া ৭০ টাকা। কিন্তু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ১১০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন অটোরিকশা চালকরা।

এদিকে, অনেকে আজও ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। তাদের অনেকেই বাস না পেয়ে ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে যান। কিন্তু সেখানেও টিকিট নেই। কেউ কেউ স্ট্যান্ডিং টিকিট পেলেও অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন- কর্মজীবী মানুষ। কর্মস্থলে ফিরতে তারা বেশি ভাড়া দিয়েই বিকল্প পরিবহনে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন।

মহানগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে আসা যাত্রী আরিফুল আলম জানান, তিনি সরকারি চাকরিজীবী। পারিবারিক কারণে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে একদিনের বেশি ছুটি নিয়ে রাজশাহী আসেন। এরপর পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজশাহীতেই আটকা পড়েন। বাস বন্ধ। ট্রেনের টিকিটও পাননি। তাই এক হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। মাইক্রোবাসে অন্য যারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় একই অবস্থা।

জানতে চাইলে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, পরিবহন নেতারা ঢাকায় আলোচনা বসছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকার বা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তেলের দাম বাড়ায় যাত্রী পরিবহনে লোকসান হবে। হঠাৎ করে তেলের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে বাস চালানো মুশকিল। আর করোনার পরিস্থিতির কারণে ভাড়া বাড়ানো যাচ্ছেনা। এ অবস্থায় তেলের দাম কমালে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। এর আগে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন এই পরিবহন নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২১
এসএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।