ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের শ্রমমানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২১
বাংলাদেশের শ্রমমানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে

ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে শ্রমমানের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে চলছে। সরকার শুরু থেকেই সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ করছে।


 
তিনি বলেন, শ্রমখাতে বিরাজমান ছোটখাট বাধাগুলো দূর করার জন্য সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ফলে বাংলাদেশের শ্রমমানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
 

আইনমন্ত্রী শনিবার (৬ নভেম্বর) দিনগত রাতে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৩তম সভায় এসব কথা বলেন বলে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
 
সভায় বাংলাদেশে শ্রমমানের অধিকতর উন্নয়নে ২০২১-২০২৬ সময়কালে বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।

১ নভেম্বর থেকে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে আইএলওর গভর্নিং বডির এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
 
আইএলও-কে আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যেই জবরদস্তি-শ্রম সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ২৯ এর প্রটোকল অনুসমর্থনের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। এছাড়া শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োগের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুমোদনের বিষয়ে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
 
তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে সহযোগিতা করার জন্য শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিটি অফিসে প্রি-অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পখাতেও ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ২০১৩ সালের ১৩২টি থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১ হাজার ৪৫টিতে উন্নীত হয়েছে। এ বছর ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের সফলতা প্রায় ৯০ শতাংশ।
 
শ্রমমান পরিদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রম পরিদর্শকের ৮৯টি পদে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জনবল ও অর্থ বরাদ্দসহ কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরকে দ্বিতীয় ধাপে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। শ্রম পরিদর্শকদের পেশাকে আকর্ষণীয় করার জন্য পদোন্নতির লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ ও পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের ২৩টি কার্যালয়কে লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশনের (লিমা) আওতায় আনা হয়েছে। কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পরিদর্শন পরিচালনা কাযর্ক্রম শুরু করেছে, যা স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পেশাগত সেইফটি কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন কারখানা পর্যায়ে ৬ হাজারের বেশি সেফটি কমিটি কাজ করছে। অধিকন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে হেল্প লাইন চালু করেছে।  

তিনি বলেন, জুন ২০২০ হতে জুলাই ২০২১ সময়কালে অনেক শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ নারী শ্রমিক।

আইন মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৯ সালের জুনে অনুষ্ঠিত ১০৮তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আইএলও কনভেনশন ৮১, ৮৭ এবং ৯৮ বাস্তবায়নের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ২০২১ সালের জুনে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে আইএলওতে দাখিল করে। রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ বিষয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে দায়ের করা কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে রোডম্যাপ ও কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।
 
আইএলওর সুপারিশ ও কনভেনশনের আলোকে শ্রম আইন, ২০০৬, শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ ও বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯ সংশোধন এবং ইপিজেড শ্রম বিধিমালা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রম আদালতে মামলার জট কমানোর জন্য নতুন নতুন শ্রম আদালত স্থাপন করা হচ্ছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মানসম্পন্ন পরিচালনা পদ্ধতি তৈরির জন্য আইএলওর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।  

তিনি উল্লেখ করেন যে, গত এক বছরে শ্রম খাতে কোন অসন্তোষ দেখা যায়নি।
 
সভা শেষে রোডম্যাপের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য আইনমন্ত্রী প্রতিমাসে তিনটি করে সভা অনুষ্ঠানসহ শ্রমিক সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী, জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গৌতম কুমার, কল-কারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউএন) সামিয়া আনজুম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. হুমায়ুন কবীর, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকেরুল আবেদীন আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২১
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।