গাবতলী থেকে: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দূরপাল্লার পরিবহনে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। বর্ধিত নতুন ভাড়ায় যাত্রী কমে যাওয়ার পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসের ট্রিপ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
মেসার্স নেসা অ্যান্ড সন্স পেট্রোল পাম্পে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টার মধ্যে দুটি দূরপাল্লার বাস পেট্রোল নিতে আসে। এর পাশেই ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনেও দুটি বাস ও একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে গ্যাস নিতে দেখা যায়। ট্রেড কনসোর্টিয়াম সিএনজি এলপিজি স্টেশনে আধা ঘণ্টায় একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি বাস গ্যাস নিয়েছে।
ট্রেড কনসোর্টিয়াম সিএনজি এলপিজি ডিজে স্টেশন অপারেটর মো. জামিল হোসেন বলেন, গাবতলীতে গ্যাসের গাড়ি কম চলাচল করে। করোনাকালে আগে অনেক গ্যাসের গাড়ি ছিল। বর্তমানে গ্যাসের গাড়ি অনেক কমে গেছে। আমাদের এখানে ২৪ ঘণ্টায় ছোট-বড় গাড়ি মিলিয়ে ১১০ থেকে ১২০টি গাড়ি প্রতিদিন গ্যাস ভরে। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের এখানে ডিজেল-পেট্রোল চালু হবে।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের ম্যানেজার মো. শাহিন বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০টি বাস ও প্রাইভেট কার গ্যাস নিতে আমাদের স্টেশনে এসেছে। গাবতলীতে গ্যাসের গাড়ির তুলনায় তেলের গাড়ি অনেক বেশি চলে। ৫ শতাংশ গ্যাসের গাড়ি আর বাকি সব তেলের গাড়ি।
তিনি আরও বলেন, গ্যাসের গাড়িকে তেলে কনভার্ট করতে খরচ কম লাগে। অন্যদিকে তেলের গাড়ি থেকে গ্যাসের গাড়িতে কনভার্ট করতে বেশি খরচ হয়। বাস গ্যাসে কনভার্ট করতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
মেসার্স নেসা অ্যান্ড সন্স পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার দেবদাস বণিক বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ি সিএনজি চালিত। বেশির ভাগ বাস তেলে চলে। অল্প কিছু বাস সিএনজি চালিত। মফস্বল এলাকায় সিএনজি স্টেশন নেই। এ কারণে দূরপাল্লার সব পরিবহন তেলে চলে। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আগে আমি প্রতি দিন ২ হাজার লিটার তেল বিক্রি করতাম। এখনো প্রতিদিন ২ হাজার লিটার তেল বিক্রি করছি। তেলের দাম বাড়ায় তেল বিক্রিতে আমাদের কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাসচালক মো. রুবেল বলেন, গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী প্রতি দিন ৩/৪টি ট্রিপ মারতে পারি। রাস্তায় যানজট, মেট্রোরেলের কাজ—এসব কারণে ঠিকভাবে ট্রিপ মারতে পারি না। প্রতি দিন রাস্তায় তেলের খরচসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ আছে। এই খরচের পড়ে গিয়ে আমার ও হেলপারের বেতন তুলতে হয়। মাঝে মাঝে মালিককে কোনো টাকা দিতে পারি না। কোনোমতে খরচের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরি। তেলের দাম বাড়ায় চালক কন্ডাক্টরের তেমন কোনো লাভ হয়নি। লাভ হলে হতে পারে মালিকের।
বসুমতি পরিবহনের কন্ডাক্টর গোবিন্দ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, লোকাল যাত্রীদের সঙ্গে খুচরা ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু দূরের যাত্রীদের সঙ্গে তেমন কথা বলা লাগে না। তেলের দাম বাড়ছে বলেই বাসের ভাড়া বেড়েছে। তেলের দাম কমলে আবারো বাসের ভাড়া কমবে।
তিনি বলেন, সিটিং বাসের সব ভাড়া পায় মালিক। শুধু লোকাল যাত্রীর ভাড়া আমি আর ড্রাইভার পাই। এটুকুই হলো আমাদের বাড়তি ইনকাম।
গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার নোমান সরদার বাংলানিউজকে বলেন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ার পর বিআরটিএ’র নির্ধারিত বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা যেতে চায় না। টিকিট বিক্রি কমে গেছে। তেলের দাম বাড়ানোর আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাবতলী থেকে ৮-১০টি ট্রিপ যেত দক্ষিণবঙ্গে। সেই ট্রিপ কমে বর্তমানে যাচ্ছে ৬-৭টি। দূরপাল্লার সব বাস চলে তেলে, কোনো বাস গ্যাসে চলে না।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করা হয়। পুনর্নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী রাজধানীতে বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ ও ১০ টাকা। দূরপাল্লার গণপরিবহনের ভাড়া ১ দশমিক ৮০ টাকা বৃদ্ধি চূড়ান্ত করেছে বিআরটিএ।
গত রোববার (৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টাব্যাপী বিআরটিএর সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকে এই ভাড়া নির্ধারণ হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকায় বন্ধ হচ্ছে কথিত ‘সিটিং সার্ভিস’
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২১
এমএমআই/এমজেএফ