ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

নারদ নদ দূষণমুক্তকরণে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
নারদ নদ দূষণমুক্তকরণে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

রাজশাহী: দলমত নির্বিশেষে প্রশাসন, সমাজকর্মী ও সাধারণ মানুষসহ সবার অংশগ্রহণে নাটোরের নারদ নদ দখল-দূষণমুক্তকরণে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘নারদ নদ দখল-দূষণমুক্তকরণে আদালতের নির্দেশনা: বাস্তবায়নে অগ্রগতি ও করণীয়' শীর্ষক এক সভায় এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

 

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে রাজশাহী মহানগরের একটি রেস্তোরাঁয় উপকারভোগীদের অংশগ্রহণে এ সমন্বয় সভায় আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারদ নদকে কেন্দ্র করেই নাটোরের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। নদ পথে মালামাল আনা-নেওয়া হতো। নদের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয় জনগোষ্ঠী। নাটোর সদর থেকে গুরুদাসপুর পর্যন্ত প্রবাহিত পথে নাটোর শহরের মধ্যে নদটির প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পড়েছে। সর্পিলাকার এ নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। কিন্তু অবাধ দখল-দূষণের ফলে একদিকে যেমন নারদ নদের প্রবাহ কমে গেছে। অন্যদিকে কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদে ফেলায় পানি দূষিত হওয়াসহ অসহনীয় গন্ধে শহরের বাতাস প্রতিনিয়ত ভারী হচ্ছে। মশা-মাছি উপদ্রব বাড়ছে। এছাড়াও নানা রকম চর্ম রোহে আক্রান্ত হচ্ছেন নদ পাড়ের মানুষ। এতে নদের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক জীবন।

বক্তারা আরও বলেন, নারদ নদ দূষণ-দখল থেকে মুক্ত করাসহ নদের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবিতে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট মামলা (রিট নম্বর ৭৩২/২০১৪) দায়ের করে বেলা। রিটের শুনানি শেষে আদালত নারদ নদের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এমন সব স্থাপনা অপসারণ এবং নদে বর্জ্য নিষ্কাশনের ও পানি দূষণের সব ধরনের দূষণের উৎস থেকে নদকে রক্ষা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি আদালত রুল জারি করেন। কিন্তু ২০২১ সালের আগস্ট মাসে নারদ নদ পরিদর্শনে দেখা যায়, নদের ওপর নির্মিত ৩৭টি স্থাপনার মধ্যে মাত্র একটি স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে।

বর্জ্য নারদ নদে ফেলা থেকে বিরত থাকতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নদের ওপর নির্মিত সব স্থাপনা অপসারণ এবং দখল-দূষণমুক্ত করাসহ নদটির প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ পরিদর্শনকালে দৃশ্যমান হয়নি।

নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করে একে রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ে নদকে ‘জীবন্ত সত্তা' উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা মানুষের জীবন-জীবিকা নদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু মানুষ নিজেই এ সম্পর্কটি নষ্ট করেছে। অথচ মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদ। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে নারদ নদটি মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। এ নদকে রক্ষা করার সময় এসেছে। আশপাশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে নারদ নদ রক্ষায় সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নদের দূষণ রোধ হবে। যদি তা না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট মো. মিজানুর রহমান, দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, এনজিও সাথীর নির্বাহী পরিচালক মো. শিবলী সাদিক প্রমুখ। এতে সঞ্চালনা করেন বেলার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।