ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভোটের সময় মা-খালা, পরে চেনে না

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
ভোটের সময় মা-খালা, পরে চেনে না ভোটের সময় মা-খালা, পরে চেনে না। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: ভোটের সময় মূল্য থাকে। ভোটের পর কোনো মূল্য থাকে না।

কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ খোঁজও নেয় না। যখন ভোট দেবো তখন খোঁজে, মা-খালা ও ফুফু বলে ডাকে প্রার্থীরা। ভোট যখন চলে যায় তখন কাউকে চেনে না।

যার যার স্বার্থ সে নিজে বোঝে। আমরা প্রশাসনের কোনো সাহায্য পাই না। মেডিক্যাল সাহায্য পাই না। কোর্ট-কাচারিতে সাহায্য পাই না। আমরা কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাই না। এমনই অভিযোগ তুলেছেন রূপসা উপজেলার আইজগাতি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেরি হিজড়া।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরের পর রূপসার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়া শেষে  দুঃখ ভরা মন নিয়ে মেরি বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা  রোমানা  হিজড়া বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের আগে সবাই চেনে পরে কেউ চেনে না। কাউন্সিলে বা কোথাও সাহায্যের জন্য গেলে কেউ আমাদের  কেয়ার করে না। আজ না কাল বলে। লকডাউনে কাজ ছিল না।  বাইরে যেতে পারিনি। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ খোঁজ নেয় নি।

তিনি বলেন, তাদের কাছে গেলে বলে- তোমাদের বাসায় সাহায্য চলে যাবে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সাহায্য পাইনি। আমরা খুব কষ্টে থাকি। আমরা চাই সবাই আমাদের সহযোগিতা করুক। আমাদের পাশে থাকুক।

আক্ষেপ নিয়ে রোমানা বলেন, আমি এসএসসি পাস। চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কোথাও চাকরি হয়নি আমার। আমি এবার প্রথম ভোট দিয়েছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।  

বালিকা নামের এক হিজড়া বাংলানিউজকে বলেন, সমাজে আমাদের দাম নেই। আমরা খুব কষ্টে থাকি। আমাদের চাকরি নেই। কেউ কোনো কাজেও নেয় না।

হিজড়াদের অধিকার ও মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করা গবেষক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, হিজড়া সম্প্রদায় দেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। সংবিধান অনুযায়ী দেশের সব মানুষ সমান। ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে,  দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর লোকজন চরম অবহেলার শিকার। সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও সমাজে তাদের অবস্থানের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সমাজে তারা প্রতিনিয়ত তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হয়। নিজ পরিবারেও তারা অচ্ছুত ও অনাদৃত। বেশির ভাগ হিজড়াই কোনো সম্মানজনক জীবিকায় নেই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, আশা করছি সরকার হিজড়া সম্প্রদায়ের  অধিকারের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
এমআরএম/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।