ঢাকা: বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য সম্পর্কে আশালীন বক্তব্য দিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এর মধ্যেই ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে তার অকথ্য ভাষায় ফোনালাপ সেই সমালোচনাকে উসকে দিয়েছে আগুনে ঘি ঢালার মতো।
সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে তার এ ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিতর্কিত এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সরকারের মন্ত্রীরাও বিব্রত বোধ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও মুরাদ হাসানের ওপর অনেকেই বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে দল ও সরকারের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
এদিকে মুরাদ হাসানের পরিণতি কী হবে তা নিয়েও ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বাইরে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে ডা. মুরাদ হাসানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ডা. মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হচ্ছিলেন।
সম্প্রতি তিনি খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্যকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নারী বিদ্বেষী এবং বর্ণবিদ্বেষী বলে অভিযোগ তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা। নারী অধিকার কর্মীরাও নিন্দা জানাচ্ছেন। এরইমধ্যে ৪০ জন নারী অধিকার কর্মী মুরাদ হাসানের বক্তব্যকে নারী বিদ্বেষী উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্যান্য মহল থেকেও তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের যে ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তিনি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছেন। অশ্লীল ভাষায় মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঠিয়ে তুলে আনার হুমকিও দেন।
এর মধ্যে বেরিয়ে এসেছে মুরাদ হাসানের পুরনো রাজনৈতিক পরিচয়ও। ছাত্র জীবনে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যালে কলেজে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কমিটিতে ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। পরে মুরাদ হাসান ছাত্রলীগে যোগ দেন।
এমন সব ঘটনার পর সরকার তাকে নিয়ে কী ভাবছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ ধারণা করছেন। তবে এ নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।
এর আগে ডা. মুরাদ হাসান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কথিত আছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাকে সেখান থেকে সরিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের এক সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ সম্পর্কে কথা বলেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দলের বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য না। এই ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এসকে/এজে