পাথরঘাটা (বরগুনা): হাসপাতালের মেঝেতে অগ্নিদগ্ধ দুই হাত উঁচু করে বসে আছেন স্ত্রী হনুফা বেগম। পাশেই শুয়ে পুড়ে যাওয়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মেয়ে রুবি আক্তার।
দীর্ঘদিন স্ত্রী হনুফা বেগমের শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসা করিয়ে মেয়ে রুবি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে স্বামী সুস্থ অবস্থায় অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সেই স্বামীই আজ না ফেরার দেশে। ঘটনার পরেই মা মেয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বরিশাল মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকলেও স্বজনরা শিক্ষক আ. রাজ্জাককে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। দুপুর ২টার দিকে ওই শিক্ষকের মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
স্ত্রী হনুফা বেগম মোবাইলে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হঠাৎ আগুন দেখে ছুটাছুটি করছে লঞ্চে থাকা মানুষজন। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। মানুষের কান্নাকাটি এবং কাঠ লোহা পোড়ার শব্দে একাকার। কিছুক্ষণ পর আমাদের শরীরে আগুন লাগার পর স্বামী আমাকে ও মেয়ে রুবিকে লঞ্চের সামনের দিকে ঠেলে দেওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন দেখি আমরা হাসপাতালে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী কোন হাসপাতালে আছে আপনারা বলেন। আমার স্বামীর কাছে যাবো। একমাত্র মেয়ে রুবি পাশেই যন্ত্রণায় ছটফট করছে, ও বাবাকে খুঁজছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে কয়েকশ।
আ. রাজজাক পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা দাখিল মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক। তার বাড়ি পাথরঘাটা পৌরসভার ৬ নম্বর ওযার্ডে। তার মেয়ে রুবি আক্তার বরিশাল বিএম কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ১০ দিন আগে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন স্বামী আ. রাজ্জাক।
হনুফা বেগমের বোনের ছেলে শফিকুল ইসলাম সজিব বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালা অসুস্থ। দীর্ঘ ১০ দিন ঢাকায় চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় খালার দুই হাত এবং পায়ে আগুনে পুড়ে যায়। আর বোনের শরীরের প্রায় অংশই পুড়ে যায়। দুইজনই চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খালুর মৃত্যুর খবর তাদের জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
এনটি