ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লঞ্চে আগুন: মালিক-মাস্টারসহ ২৮ জনের নামে আরেক মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
লঞ্চে আগুন: মালিক-মাস্টারসহ ২৮ জনের নামে আরেক মামলা

বরিশাল: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ও নিখোঁজের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে।

ঢাকার পেমরা থানাধীন পূর্ব বক্সনগর এলাকার বাসিন্দা ও ইট-বালু ব্যবসায়ী মনির হোসেন ঝালকাঠি সদর থানায় লঞ্চের মালিক, চালকসহ আটজনের নামে ও অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, ৩০৪ ধারায় মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার আট আসামিরা হলেন, মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোং ও এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, লঞ্চের মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার, মো. খলিল,
লঞ্চের চালক মো. মাছুম, কালাম, লঞ্চের সুপারভাইজার মো. আনোয়ার, লঞ্চের সুকানি আহসান ও কেরানী মো. কামরুল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মনির হোসেনের বোন তাসলিমা আক্তার (৩০) ও তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৫), সুমনা আক্তার তানিসা (১০) এবং ছোট ভাই জনির ছেলে জোনায়েদ ইসলাম বায়জিদ (৭) গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনায় তার স্বামী সুমন সরদারের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। বাদী তাদের ঢাকার সদরঘাটে ওই লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান। ওই দিন রাত ৩টা ১০ মিনিটের দিকে বোন তাসলিমা তাকে ফোন দিয়ে জানান, ৩টা ৫ মিনিটের দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটি পৌঁছালে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে ইঞ্জিন রুমের আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তার বোন আরও বলেন, আমরা মনে হয় আর বাঁচবো না”। এরপর থেকে বাদী তার বোনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও সেটি বন্ধ পান। এরপর তিনি তার ছোট ভাই জনি ও বিয়াই আকাশকে নিয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশে রওয়ানা দেন । গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ৯টার দিকে পৌঁছে তিনি ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধা নদী তীরে রাখা এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের উদ্ধার কাজ করতে দেখেন। সেসময় মূলত আহত-নিহতদের উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিলেন তারা।

বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার বোন, দুই ভাগনি ও ভাতিজাকে খুঁজতে থাকেন কিন্তু ব্যর্থ হন। ওই সময় উদ্ধার হওয়া ৩৬টি মরদেহের মধ্যেও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেন বাদী। তবে ১২টি মরদেহ শনাক্তের যোগ্য ছিল বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেন।

এরপর তিনি জীবিত যাত্রী ও উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, লঞ্চটি ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর আগেই কিছু যাত্রী ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পেয়ে স্টাফদের খবর দেন, তারা ইঞ্জিনে ত্রুটি আছে জানালেও কোনো সমস্যা হবে না বলে মত প্রকাশ করেন। এরপর লঞ্চটি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে বরগুনার দিকে অগ্রসর হলে রাত ৩টা ৫ মিনিটে বিকট শব্দে ইঞ্জিন রুমে আগুন লেগে যায়। এতে একটি ইঞ্জিন বিকল হলেও অপর ইঞ্জিন সচল থাকায় যাত্রীরা লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে বলেন। তবে বারবার অনুরোধেও লঞ্চটিকে স্টাফরা তীরে না ভিড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তবে কিছু সময় পরে গোটা লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পরে এবং লঞ্চটি ভাসতে ভাসতে দিয়াকূল এলাকায় এসে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে থেমে যায়। এ সময় যাত্রীরা আগুন থেকে নিজের বাঁচতে নদীতে ঝাপ দেন। লঞ্চ থেকে ছাপিয়ে পড়ে এবং আগুনে পুড়ে আনুমানিক ১৯০/২০০ যাত্রী আহত এবং তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। তবে এখন পর্যন্ত বাদীর বোন, দুই ভাগনি ও ভাতিজা নিখোঁজ রয়েছেন বলে মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন।

এদিকে সকালে দুটি মরদেহ উদ্ধারসহ এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।