ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খালেদার দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
খালেদার দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নেই কথা বলছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, অনেকে বলছেন, ওই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগের কথা। কিন্তু সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

আমি বারবার বলে আসছি, একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত, আইনে পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নেই।

তিনি বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেটি কিন্তু আওয়ামী লীগ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালীন তারা অন্তত ১০ বার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলায় পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।

তিনি (খালেদা জিয়া) যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দুটি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেন বলেও যোগ করেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, পুনরায় যদি একটি দরখাস্ত করা হয় সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি। শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলে যেতে চান সেটাও হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নেই, তাকে আমরা আগের দরখাস্ত বিবেচনা করে বিদেশ যাওয়ার সুবিধা করে দিতে পারি, সেটা নেই। অনেকে বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা কারো বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে না। কিন্তু আমি কখনো বলিনি যে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানো যাবে না। কিন্তু একবার নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনা সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নেই।  

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতাল তার (খালেদা জিয়া) প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি তারা সর্বশেষ টেকনোলজির একটি ক্যাপসুল আমদানি করেছেন। যেটা খেয়ে ফেললে ভেতরে গিয়ে ক্যামেরা কাজ করবে। ভেতরের সব অবস্থা ক্যামেরাবন্দি হবে। আমি তার সর্বশেষ অবস্থা জানি না, তবে যতটুকু জানি তার শারীরিক অবস্থা আগের চাইতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি যতটুকু সম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই। তারা যেভাবে চান সেভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন। ১০টি নাম সার্চ কমিটির সুপারিশ করতে পারবে, সেই ১০টি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এটা অ্যাক্টের ওপরে হয়েছে, এটা আইন না। এটার ওপরে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি, আইন হওয়া উচিত। সুজনের প্রতিনিধিও গিয়েছিল। আমি পরিষ্কার বলেছি নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন হওয়া দরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। তাই সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কোনো অর্ডিন্যান্স করবো না।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে ডায়ালগ শুরু করেছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরমধ্যে যেহেতু সংসদ আইন করতে পারবে না। আগে যে পদ্ধতিতে হয়েছে সেই নিয়মে হতে পারে, অথবা ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি রয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন ১০ জনকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই।

বিচারপতি নিয়োগে কোনো বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কিনা আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দুটি বিষয়ে কখনো রাষ্ট্রপতিকে কেউ জিজ্ঞাসা করতে হয় না বা পারেন না। এটা তার সর্বময় ক্ষমতা, এক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা ও দ্বিতীয়ত, বিচারপতি নিয়োগ করা। যে কাজটা রাষ্ট্রপতির, সেটি আমি কি করে বলবো! আমি তো সরকারের মন্ত্রী। বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি তার সুবিবেচনা ও আইন অনুযায়ী ক্ষমতার প্রয়োগ করে যা ভালো মনে হবে তাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি মনে করি, আপিল বিভাগে অনেকেই প্রধান বিচারপতি হবার যোগ্যতা রয়েছে। আর সরকারের এসব নিয়ে কোনো চিন্তায় নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে আমরা নিজস্ব চ্যানেলে খবর নেই, খবর দিতাম। এখন সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানছেন, আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে আগে চলে আসছে। যেকারণে সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার কারওয়ান বাজারে আনা হয়েছে।  

সভায় যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এদেশের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, নির্যাতনকারীদের বিপক্ষে, বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে। সব কথাই আমরা বলবো, লিখবো, তবে আমরা ন্যায়ের পক্ষে থেকে। রিপোর্টারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আজ যারা ক্রাইম বিটে কাজ করছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। লেখনি, সংবাদ উপস্থাপনে আমরা এমন কিছু করবো না যাতে দেশের ক্ষতি হয়। পাঠক, দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের শেষ পর্যন্ত ভরসা পাঠকের আস্থা-বিশ্বাস।  

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবশ্যই প্রয়োজন। যখন ক্ষতিগ্রস্ত হই তখন মনে হয়, এই আইনের যেন অহেতুক প্রয়োগ না হয়। অপমানজনক হলেই আমাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়ে যায়। যে কেউ কারো পক্ষে মামলা করেন বসেন, আর হুলিয়া, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। অথচ আমাদের হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। বিষয়টি নিশ্চয় আইনমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।  

ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।