ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেকে সিটি স্ক্যান রুমে চলে প্যাকেট বাণিজ্য, দাম ১০০

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২২
ঢামেকে সিটি স্ক্যান রুমে চলে প্যাকেট বাণিজ্য, দাম ১০০ ছবিতে বেসরকারিভাবে তৈরিকৃত প্যাকেট হাতে নজরুল ইসলাম

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান রুমে চলে প্যাকেট বাণিজ্য। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সিটি স্ক্যান করতে দুই হাজার টাকা নিলেও নিজেদের উদ্যোগে সিটি স্ক্যান ফিল্ম বহন করা প্যাকেটের জন্য নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে।

 

সিটি স্ক্যান রুমে দায়িত্বরত অনেকেই বলছেন, ফিল্ম বহনকারী সরকারি প্যাকেট সাপ্লাই এখন বন্ধ, তাই নিজেরাই কিছু প্যাকেট বানিয়ে সেটার কিছু মূল্য নিয়ে সিটি স্ক্যান ফিল্ম সেই প্যাকেটে ভরে দিচ্ছেন।  

তবে সিটি স্ক্যান রুমে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা অল্প কিছু টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ১০০ টাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

রোববার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে লালবাগ শহীদ নগর সংলগ্ন বেড়িবাঁধে দ্বীন ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। পরে পরিচিতি নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।  

দ্বীন ইসলামের মাথায় সামান্য আঘাত থাকার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে সিটি স্ক্যানের জন্য জরুরি বিভাগের সিটি স্কিন রুমে পাঠান। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে দ্বীন ইসলামকে সিটি স্ক্যান রুমে (নম্বর ১৪) নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ম অনুযায়ী দ্বীন ইসলামের সিটি স্ক্যান করানোর পরে সরকারি ফি অনুযায়ী দুই হাজার টাকা দেন নজরুল ইসলাম।  

পরে সিটি স্ক্যান রুম থেকে সিটি স্ক্যান করা ফিল্ম নজরুল ইসলামের হাতে দিলে, তিনি তাদের কাছে সিটি স্ক্যানের ফিল্ম নেওয়ার প্যাকেট চান। একপর্যায়ে সেখানে দায়িত্বরত লোকজন বলতে থাকেন যে প্যাকেট নিতে হলে আলাদা ১০০ টাকা দিতে হবে। একপর্যায়ে নজরুল ইসলাম বাড়তি ১০০ টাকা দিয়ে প্যাকেট নিতে রাজি না হলে সেখানে দায়িত্বরত লোকজন তাকে বলতে থাকেন প্যাকেট নিতে চাইলে ১০০ টাকা দিয়েই নিতে হবে। কারণ প্যাকেটের ওপরে এরই মধ্যে রোগীর নাম লেখা হয়েছে। একপর্যায়ে তারা জোরজবদস্তি করতে থাকেন।

নজরুল ইসলাম জানান, এমনিতেই সরকারি ফি অনুযায়ী দুই হাজার টাকা দিয়ে সিটি স্ক্যান করিয়েছি। তারপর সেই ফিল্মটা নিয়ে প্যাকেটে ভরে আমাকে বলে বাড়তি টাকা ১০০ টাকা দিতে হবে। কিন্তু আমি বাড়তি টাকা দেব না বললে তারা জোর করতে থাকেন। সিটি স্ক্যান রুম থেকে দায়িত্বরতরা বলছেন, প্যাকেটের গায়ে নাম লেখা হয়েছে, এটা না নিলেও টাকা দিতে হবে।

একপর্যায়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে সিটি স্ক্যানের দায়িত্বে থাকা লোকজন নজরুল ইসলামকে বিনা টাকায় সে প্যাকেটটি দিয়ে দেন।

ঢামেকের রেডিওলজি বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট কামাল উদ্দিন জানান, সরকারিভাবে সাপ্লাই দেওয়া প্যাকেট শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি লিখিতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে পাওয়া যাবে।

তিনি আরো বলেন, বেসরকারিভাবে তৈরি সিটি স্ক্যান ফিল্ম বহনকারী প্যাকেট দিয়ে আলাদা মূল্য রাখা হচ্ছে বলে শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ, কারা করছে আমি জানি না। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।

এদিকে হাসপাতালে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, রেডিওলজি বিভাগ থেকে সিটি স্ক্যান বহনকারী প্যাকেট শেষ হয়ে গেছে- এ রকম একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে প্যাকেটগুলো সাপ্লাই দেওয়া হবে।  

এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশরাফুল আলম বলেন, হাসপাতাল থেকে প্যাকেট দেওয়া হয়। সেখানে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি সাপ্লাই শেষ হলে বাইরে থেকে প্যাকেট বানিয়ে আনার এবং  টাকা বিনিময়ে সেটা দেওয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২১
এজেডএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।