ঢাকা: মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ‘টিকা কার্ড ছাড়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু রেস্টুরেন্টে প্রবেশের আগে কাস্টমারের কাছে টিকা কার্ড আছে কি-না সেটা কতটা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি শুরুর আগে দেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁ ছিল। এখন সে সংখ্যা ৫০ হাজারে নেমে এসেছে। মহামারি করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনে কয়েক দফায় ব্যবসা বন্ধ থাকায় এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। একই সময়ে আর্থিক সংকটে ৫০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকানা বদল হয়েছে। আর ক্ষতি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
ধীরে ধীরে এসব রেস্তোরাঁর ব্যবসা আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু না করতেই সরকার করোনার সংক্রমণ রোধে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের কোনো রেস্টুরেন্টে টিকা কার্ড ছাড়া কেউ খেতে পারবে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত আসছে। ওমিক্রন নিয়ে ৩ জানুয়ারি সচিবালয়ে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, রেস্তোরাঁ মালিক ও কাস্টমারদের জন্য তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ রেস্তোরাঁয় কাস্টমারের টিকা কার্ড চেক করার দায়িত্ব পালন করবেন রেস্তোরাঁর প্রতিনিধি। আবার একই পরিবারের একাধিক সদস্য খেতে এলে দেখা যাবে একজনের টিকা কার্ড নেই। তখন এই কাস্টমারদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে। তারা রেস্তোরাঁয় খেতে পারবেন কি-না সে বিষয়ে কে সিদ্ধান্ত নেবে?
কয়েকজন কাস্টমার মনে করেন টিকা কার্ড নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ এটা কে নিশ্চিত করবে। রেস্তোরাঁ মালিকরা কখনোই চাইবে না টিকা কার্ড না থাকার কারণে কোনো কাস্টমার ফেরত যাক। আবার একসঙ্গে কয়েকজন মিলে খেতে যাওয়ার সময় দেখা যাবে একজনের কাছে টিকা কার্ড নেই। তাহলে কিভাবে টিকা কার্ড নিয়ে রেস্তোরাঁয় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
রেস্তোরাঁয় নিয়মিত খেতে যান এমন কয়েকজন বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নিলে সব জায়গার জন্যই নিতে হবে। শুধু রেস্টুরেন্টে কেন?
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক ও অভিজাত রেস্তোরাঁ রিও লাউঞ্জের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। অহেতুক হয়রানি করলে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করবে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে ব্যবসায়ীদের ওপর খরবদারি বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান হাসান বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ প্রসারিত করতে একটি মহলের ইন্ধনে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। টিকা কার্ড নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বসহ খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা ব্যবসা করবো নাকি কাস্টমারের টিকা কার্ড চেক করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু রাখছি কি-না সরকার সেটা নিশ্চিত করুক। দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ২ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ কর্মচারী। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের কোনো মতামত না নিয়ে সরকার যখন যেটা মনে করছে সেই সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পথে বসে যাবো।
তিনি বলেন, সরকার সব খাতে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, কিন্তু হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকতো দূরের কথা কর্মচারীদেরও কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২২
এসই/এনএইচআর