ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী

ঢাকা: ব্রি ও সহযোগি সংস্থাসমূহর গবেষণার ফলাফলে বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি সমাজে প্রচলিত ছিল তার অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর উদ্যোগে এবং অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও), ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড (ইউএসকিউ), এসিএআইআর ও অস্ট্রেলিয়ান এআইডি এর সহযোগিতায় আয়োজিত ‘উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্থায়িত্ব এবং ধান উৎপাদন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জুম প্লাটফর্মে যুক্ত ছিলেন- কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোঃ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম এবং বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রশীদ।  

প্রসঙ্গত, বোরো ধান চাষে ভূগর্ভস্থ পানিস্তরের অবনমন হয় না। ধারণা (মিথ) আছে ১ কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় ৩০০০ থেকে ৫০০০ লিটার সেচের পানি লাগে কিন্তু ব্রির গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশের নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাত্র মাত্র ১০০০ থেকে ১৬০০ লিটার সেচের পানি দিয়ে কৃষকরা সফলভাবে ১ কেজি ধান উৎপাদন করছেন। শুধুমাত্র সেচ বিবেচনায় এই পানির প্রয়োজন আরো কম। যার মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ (৪০০-৬৫০ লিটার) সীপেজ ও পারকুলেশনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে যায়। সুতরাং ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির প্রয়োজন হয় ৫৫০-৬৫০ লিটার/কেজি।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বোরো ধানে পানির অপচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি সমাজে প্রচলিত ছিল ব্রি ও সহযোগি সংস্থাসমূহের এই গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে সে বিভ্রান্তির অবসান হবে।  

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ এই সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের উচিত এই ধরনের বিভ্রান্তি নিরসনে একযোগে গবেষণার কাজ পরিচালনা করা।  

ওয়েবনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে যুক্ত ছিলেন প্রফেসর ইমিরেটাস ও প্রাক্তন উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড. এম এ সাত্তার মন্ডল এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান। ওয়েবিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান ড. মোঃ মনিরুজ্জামান এবং কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও) অস্ট্রেলিয়ার প্রিন্সিপাল রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ড. মোঃ মাঈন উদ্দিন।

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনায় প্রফেসর ইমিরেটাস ড. এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ার জন্য বোরো ধানের আবাদই একমাত্র দায়ী নয়। শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলে পানির প্রবাহ কম থাকায় বেজ ফ্লো হিসাবে ভূ-গর্ভস্থ পানির একটি অংশ নদীতে চলে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বন্যার পানি প্রথমে ভূ-গর্ভস্থ পানির সেই খালি জায়গা পূরণ করার ফলে বন্যার তীব্রতা হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগসহ ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নদী-নালা, খাল-বিলে পানির সংরক্ষণের পরিমাণ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাফল্যজনকভাবে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ সম্ভব হবে।  

কর্মশালার দুই প্রবন্ধকার জানান, কৃষি কাজে পানির অধিক ব্যবহারের ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো জায়গায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে যাচ্ছে। এ সমস্যাকে সামনে রেখে ভূ-গর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার, ধান উৎপাদনে প্রকৃত পানির পরিমাণ ও স্বল্প খরচে ধান উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ব্রি ও অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড (ইউএসকিইউ) এবং এসিআইএআর, অস্ট্রেলিয়া গত পাঁচ বছর ধরে কয়েকটি গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছে।  

এসব গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বিগত দশ বছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর এলাকা বাড়ে নাই, তবে উন্নত জাতসহ অন্যান্য কারণে বোরোর ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়াও বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার ও ক্রপিং প্যাটার্ন ভিত্তিক ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীল ও ফসলের পানি ব্যবহার দক্ষতা আরো বাড়ানো সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রি মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, সারা দেশে বোরো ধান চাষে সেচের পানির ব্যবহারের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে নেতিবাচক প্রচারণা ঠিক নয়। শুধুমাত্র ঠাটা বরেন্দ্র অঞ্চলে কিছু এলাকায় এটি হতে পারে। ভূ-গর্ভস্থ একুয়াফায়ারগুলো পানির রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে। সুতরাং এসব নেতিবাচক প্রচারণায় বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬,২০২২
জিসিজি/এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।