ঢাকা: উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কার্যালয় খোলা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ‘সহায়তা’ শব্দটি ব্যবহারে সাবধান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমরা আইএমইডিকে শক্তিশালী করতে বিভাগীয় পর্যায়ে কার্যালয় করছি। এছাড়া ডিসিরা প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি করার পরামর্শ দিলেও তাতে সম্মতি দেওয়া হয়নি। কারণ ডিসিদের সে ক্ষমতা রয়েছে। তারা যে কোনও সময় প্রকল্পের খোঁজ নিতে পারেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে ডিসিদের জানানো হয়েছে। আইএমইডির স্থাপনা যেন মাঠ পর্যায়ে তৈরি করা হয়। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিভাগীয় প্রধানের সহায়তা চেয়েছি। আইএমইডিকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণ, পশুপাখি হত্যা বন্ধ এবং নদীর ওপর তৈরি করা পুলের উচ্চতা যেন যথাযথ হয়- সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি।
আইএমইডির কার্যালয় স্থাপনের ফাইলটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘ঘুরপাক খাচ্ছে’ জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সময় মত নিশ্চয় এটা হবে।
মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ডিসিরা চেয়েছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন জেলা পর্যায়ে কমিটি করা হয়। আমরা বলেছি কমিটির প্রয়োজন নেই। ডিসিদের এলাকার ভেতরে উন্নয়ন কাজ দেখার অধিকার আছে। আমরা তাদের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সে অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমরা আছি। আমিও ডিসি ছিলাম। আমি মনে করি, ডিসিদের হাতে যথেষ্ট দায়িত্ব-ক্ষমতা আছে। এটা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেজন্য ব্রিটিশ ধারণার যে ইনস্পেকশন, সেটার প্রয়োজন নেই।
তিনি আরও বলেন, ডিসিরা তাদের এলাকায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প আছে, সেগুলো দেখতে যেতে পারেন। বিদ্যমান আইনে ডিসিদের উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব আছে। দেখা মানে কিন্তু ইনস্পেকশন নয়। ইনস্পেকশন শব্দটা ভয়ঙ্কর, পরিদর্শন অর্থে বলছি।
সরকারি প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বোঝাতে ‘সহায়তা’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিসিদের বৈঠকে সচেতন করা হয়েছে বলে জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, সহায়তা শব্দটা যেন সাবধানে ব্যবহার করা হয় সেদিকে আমি জোর দিয়েছি। এটা শুনলে মনে হয় খয়রাতি। আসলে সহায়তা সেই অর্থে আর নেই। উন্নয়ন বাজেট সম্পর্কে বলতে পারি- আমরা ঋণ হিসাবে বড় একটা অংশ নিই। সহায়তা মাঝে মাঝে আসে। তবে সেটা ১/২ শতাংশও হবে না। বড় বড় সংস্থা নিজেদের প্রয়োজনেই এগিয়ে আসে।
বৈঠকে সরকারি প্রকল্পগুলোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ডিসিদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসিদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। সেটা আমরা তুলে ধরেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হয়। তার বড় একটা কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটা আরও দ্রুত করার জন্য তাদের সহায়তা চেয়েছি। তারা সহায়তা দিচ্ছেন।
এর আগে সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসি সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। পরে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কার্যক্রমের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
এবার ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৬৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। মহামারির কারণে দুই বছর পর এই সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলন শেষ হবে ২০ জানুয়ারি। সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মুখোমুখি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
জিসিজি/এনএসআর