ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাওয়ায় বৃদ্ধকে গলাকেটে হত্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাওয়ায় বৃদ্ধকে গলাকেটে হত্যা নিহত ব্যক্তির বাড়িতে লোকজনের ভিড়।

রাজশাহী: এক বছর আগে মারা গেছেন স্ত্রী। দুই মেয়ে ও এক ছেলে থাকলেও তারা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

এই বৃদ্ধ বয়সে নিজের দেখাশোনা করারও কোনো লোক নেই। তাই দ্বিতীয় বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধ সাজ্জাদ হোসেন। আর এই বিয়ে করতে চাওয়াই কাল হলো তার। বাবার সম্পত্তি বেহাত হওয়ার শঙ্কায় ছেলের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারালেন ওই বৃদ্ধ।

ঘুমন্ত অবস্থায় তার গলা চেপে ধরেন ছেলে রাসেল আলী ওরফে স্বপন (৩২)। ঘুম ভেঙে কোনো রকমে ছেলের হাত থেকে বাঁচার শেষ চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু বাবা-ছেলের ধস্তাধস্তির ঘটনার পর লাঠি দিয়ে প্রথমে পিটিয়ে ঘায়েল করে দেওয়া হয় তাকে। এরপর নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলে তার গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন ছেলে। আর নৃশংসভাবে হত্যার পর বৃদ্ধের মরদেহ গুম করার জন্য ফেলে দেয় বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাঙ্কে। লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজশাহীর দামকুড়া এলাকায়।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ওই বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে বৃদ্ধের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে।  

এর আগে, তার ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। একইসঙ্গে তিনি পুলিশের সামনে এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই বাদী হয়ে আজ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই মামলায় তাকে আদালতে পাঠানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ। এখন নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহীর দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম জানান, গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিতে পর সাজ্জাদ হেসেন নামে ওই বৃদ্ধের মরদেহ গুম করতে টয়লেটের সেফটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছিল ছেলে। গত ১৮ জানুয়ারি দিনগত রাতের শেষভাবে তার ছেলে রাসেল আলী ওরফে স্বপন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর ১৯ জানুয়ারি সকাল থেকে সাজ্জাদ হোসেন নিখোঁজ হয়েছে বলে এ ঘটনায় তার ছোট ভাই সাজদার রহমান হাদী দামকুড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।  

এ ঘটনায় ওই বাড়িতে গিয়ে ছেলে স্বপনসহ আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু বাবার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় স্বপন একেকবার একেক ধরনের বক্তব্য দেন। পরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

বুধবার রাতভর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বপন এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এ সময় কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা বর্ণনা দেন এবং মরদেহ কোথায় গুম করেছেন সেই তথ্য পুলিশকে দেন। এরপর সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ওই নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে।

এ সময় স্বপন পুলিশকে জানায়, এক বছর আগে তার মা মারা যান। এরপর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা বলছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করলে বাবার সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাবে। এই চিন্তা-চেতনা থেকে স্বপন তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে গলাকেটে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আলামত জব্দ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিহত ব্যক্তির ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক ছেলেকে দুপুরের মধ্যেই আদালতে পাঠানো হবে। আদালত তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন দামকুড়া থানার ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।