ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভূরাজনীতি একক লাভের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়’

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২২
‘ভূরাজনীতি একক লাভের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়’

ঢাকা: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো শহীদুল হক বলেছেন, বর্তমানে পানিকে শুধু সম্পদ নয়, বরং একটি কৌশলগত সম্পদ হিসাবে দেখা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় নদী ভূরাজনীতিকে প্রভাবিত করে।

ভূরাজনীতি হলো রাজনৈতিক মতামত ও জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করার একটি হাতিয়ার।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘তিস্তা নদী অববাহিকাঃ সঙ্কট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল ‘৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২’-এর দ্বিতীয় দিনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শহীদুল হক বলেন, ভূরাজনীতিকে কেবল একক লাভের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। এটিকে উভয়ের জন্য লাভজনক দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিষয়ভিত্তিক প্রসঙ্গ কেন্দ্র করে আলোচনা হয়। আলোচনায় নদীর ওপর বাঁধ ইকো সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।

এতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও এনভায়রনমেন্ট গভর্নর ইন্টিগ্রেটেড অর্গানাইজেশনের পরিচালক জয়ন্ত বসু ‘জিওপলিটিক্স অব রিভার তিস্তা অ্যান্ড নিড টু পারসু ন্যাচারাল বেইজড নেগোশিয়েটেড এপ্রোচ (এনবিএনএ)’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তার গবেষণায় ওঠে আসে, দক্ষিণ এশীয় আন্তঃদেশীয় নদীর সমস্যাগুলো আঞ্চলিক ভূরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কারণ এই অঞ্চলের সব দেশ প্রধানত কৃষি, জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য কারণে নদীর ওপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। তাই এই অঞ্চলে অসম রাজনৈতিক ক্ষমতার উপস্থিতি; আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে কাজ করে।

আন্তঃদেশীয় নদীর পানি ব্যবহারের সমন্বিত মডেল বাস্তবায়নের জন্য স্টেকহোল্ডার পর্যায়ে আলোচনার আহ্বান জানান জয়ন্ত বসু। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি নেই। যদিও উভয় দেশের মধ্য দিয়ে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী বয়ে গেছে। এজন্য একটি সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, বাঁধ ও পানি ধারণ করে পানিপ্রবাহ সীমিত করলে নদীভিত্তিক মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে উভয় অঞ্চলে সুশীল সমাজ সংস্থা রয়েছে, যারা যেকোনো বিরোধপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।

নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনের বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের আলোচনায় নদীর জীবন্ত সত্তা একেবারেই হারিয়ে গেছে। আলোচনা প্রক্রিয়ায় প্রকৃতিভিত্তিক আলোচনার পদ্ধতি অনুপস্থিত। এটি জবাবদিহিমূলক এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

নিয়ম অনুযায়ী বছরে দুইবার বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন এবং এর ফলপ্রসূ পরিণতি লক্ষ্য করা যায় না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। তিনি বলেন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনার নদী ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে দেখা উচিত। এই অঞ্চলের পাঁচটি নদীপ্রধান দেশ একসঙ্গে বসে এই তিনটি নদীকে পরিচালনা করতে পারে। কারণ এটি একক নদী ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২৫টি নদীর সঙ্গে তিস্তার সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে আলোচনা না করে তিস্তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। প্রত্যেকটি নদীর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সম্মেলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক জেরিন ইয়াসমিন চৈতির উপস্থাপিত গবেষণাপত্র ‘লিভিং উইথ তিস্তা রিভারঃ উইমেনস লাইভলিহুড স্ট্র্যাটিজি ইন দ্য চেঞ্জিং ক্লাইমেট অব দ্য তিস্তা রিভার বেসিন’-এ ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নদীর সঙ্গে নারীর  দৃঢ় সম্পর্ক ওঠে আসে।

অধ্যাপক জেরিন ইয়াসমিন বলেন, তিস্তা নদীর অববাহিকায় বসবাসরত নারীরা নতুন চাষ পদ্ধতি, বিকল্প জীবিকার কৌশল এবং দুর্যোগের প্রস্তুতিতে নিয়োজিত হচ্ছেন, যা তাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। নারীরা এখন আর দুর্বল-অসহায় নয়, বরং পরিবারের জন্য ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেছে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তারা এখন আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড এবং অর্থ উপার্জনের সঙ্গে জড়িত।

এছাড়াও সম্মেলনে নেপালের আইএসইটি উপদেষ্টা অজয় দীক্ষিত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, গল্পকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক মিনকেট লেপচা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশে পানিসম্পদের গুরত্ব, পানির ন্যায্যতা এবং নদীর অধিকার নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে একশনএইড। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে সংস্থাটি। এ বছর তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিদ্যমান সঙ্কট ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২২
টিআর/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।