ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এমভি অভিযান-১০ নিয়ে নাগরিক তদন্ত কমিটির ২৫ সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এমভি অভিযান-১০ নিয়ে নাগরিক তদন্ত কমিটির ২৫ সুপারিশ

ঢাকা: এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারকে শাস্তি না দিয়ে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনাসহ ২৫ দফা সুপারিশ জানিয়েছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ আইন প্রণয়ন, টাকার পরিমাণ নির্ধারণ এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী (নৌযান মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার, সরকারি কর্মকর্তা) ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করারও সুপারিশ করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার দে।

তদন্ত কমিটির অন্যান্য সুপারিশগুলো হলো- প্রত্যেক যাত্রীবাহী নৌযানে আনসার-সিকিউরিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা, যাত্রীবাহী লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষ, প্রবেশপথ, মাস্টারব্রিজসহ স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, যে কোনো নৌযানের নকশায় অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত, সে অনুযায়ী নকশা অনুমোদন এবং যথাযথভাবে নকশা অনুসরণ করে নৌযান নির্মাণ করা, নতুন নৌযানে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রতি তিন মাস পরপর তা পরীক্ষা করা, চলমান নৌযানগুলো বিশেষ করে লঞ্চ ও অন্যান্য যাত্রীবাহী নৌযানের অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা, লঞ্চের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করা, ইঞ্জিনকক্ষের পাশ থেকে খাবারের হোটেল সরিয়ে নেওয়া এবং ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যান্টিনের আশেপাশে জ্বালানি তেলসহ কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, নৌযানের ইঞ্জিনকক্ষে আগুন লাগলে তা দ্রুত নেভানোর জন্য স্থায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড সরবরাহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা।

এছাড়া নৌযানের সব কর্মীকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিচালনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বছরে অন্তত একবার মহড়ার ব্যবস্থা করা, প্রত্যেক নাবিকের ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করা, আইএসও ৫৮ (ক) ধারা মোতাবেক যাত্রীবাহী নৌযানের বীমা অথবা নৌ দুর্ঘটনা ট্রাস্ট ফান্ড বাধ্যতামূলক করা; যেকোনো নৌদুর্ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অভিজ্ঞ নৌস্থপতি, নৌপ্রকৌশলী, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, মাষ্টারমেরিনার, নৌ পরিবহন বিষয়ক গবেষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জ্যেষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মী এবং নৌ মন্ত্রণালয়, নৌ অধিদপ্তর, নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন; প্রত্যেক দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নৌ মন্ত্রণালয় ও নৌ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, আধুনিক ও ত্রুটিমুক্ত নৌযান নির্মাণের স্বার্থে নকসা অনুমোদনের দায়িত্ব নৌ অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাহার করে একাধিক সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র নকশা অনুমোদন কমিটি গঠন করা, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধে যথাযথভাবে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য শূন্যপদগুলোতে অবিলম্বে নিয়োগ দিয়ে নৌ অধিদপ্তরের 'শিপ সার্ভেয়ার’ সংকট নিরসন ও বার্ষিক সার্ভে প্রক্রিয়ায় স্বাচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, কোন শিপ সার্ভেয়ার কোন মাসে কতোগুলো নৌযান নিবন্ধন ও সার্ভে করছেন নামসহ সেই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, দক্ষ নৌযানচালক তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিসহ এ ধরনের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ মাস্টারশিপ-ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা বোর্ড গঠন, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার ও পরীক্ষার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের নির্ধারণ করা।

আয়োজনে আশীষ কুমার দে বলেন, নৌ অধিদপ্তর থেকে সমুদ্রগামী নাবিকদের সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি), অভ্যন্তরীণ নৌযানচালকদের সনদ নবায়নসহ অন্যান্য সেবা ও নৌযানমালিকদের নিবন্ধন-বার্ষিক ফিটনেস সনদ পেতে অহেতুক কালক্ষেপণ, অর্থব্যয় ও হয়রানি হয়। এগুলো বন্ধ করে পদ্ধতি সহজ করলে সেটি সুবিধাজনক হয়। একইসঙ্গে নদীতে দ্রুতগতির টহলবোটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জলযানের ব্যবস্থা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটি ও নৌ অধিদপ্তর নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের খান, সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুলসহ অন্যান্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এইচএমএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।