রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীতে ধর্ষণের শিকার আট বছরের এক শিশুকে মাদ্রাসায় ভর্তির তিন দিন পর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই শিশুর ‘মানসিক অসুস্থতার’ অজুহাতে ভর্তি বাতিল করে তাকে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগ, মাদ্রাসায় ভর্তির তিন দিন পর ওই শিশুকে মাদ্রাসার গেটের বাইরে বের করে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। শিশুটি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল।
পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ভর্তি বাতিলের বিষয়টি জানায়। কিন্তু অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিশুর অভিভাবকের আচরণ খারাপ হওয়ায় তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনার পর শিশুটির মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাকে তার পরিবার একজন মানসিক চিকিৎসক দেখাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকরি করেন শিশুর মা। রেলওয়ের বস্তিতে একটি ঘর করে বসবাস করেন। ২০২০ সালের ২১ মার্চ শিশুর মা ছিলেন হাসপাতালে। শিশুর বাবা অটোরিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত কিশোর বাড়িতে গিয়ে শিশুটির কাছে দিয়াশলাই চায়। ওই শিশু দিয়াশলাই দিলে কিশোর সেটি নিয়ে হাঁটা ধরে। দিয়াশলাইয়ের জন্য ওই শিশুও পিছু নেয়। তখন বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে শিশুটিকে ধর্ষণ করে ওই কিশোর। ধারণ করা হয় ভিডিও। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করে। এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ মার্চ মামলা করা হয়। ওই মামলায় ওই কিশোর এখন কারাগারে।
শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা পেটের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করে। দিনে দিনে শরীর খারাপ হচ্ছে। তার মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এজন্য তাকে একজন মানসিক চিকিৎসককে দেখাচ্ছি। ১০ দিন আগে রাজশাহী মহানগরীর একটি মহিলা মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। বেসরকারি এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ভর্তির তিন দিন পর তার মেয়েকে মাদ্রাসার গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তারপর গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তখন কাঁদছিল। পরে মাদ্রাসার পরিচালক মেয়েকে দূরে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিতে বলেন।
মাদ্রাসার পরিচালক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, যেসব অভিভাবকের আচরণ খারাপ তাদের মাদ্রাসায় রাখি না। আসলে শিশুটির মা-বাবার আচরণ খারাপ। এমন কথা বলে যে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হয়। এজন্য অন্যান্য অভিভাবক আপত্তি করেন। তাই শিশুটির ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি আমরা পরে শুনেছি।
মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, শিশুটির মায়ের দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তারপর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
ডিএনএ টেস্ট না হওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন ওই পুলিশ কমকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এসএস/এএটি