ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গণঅনশন কর্মসূচিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
গণঅনশন কর্মসূচিতে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা এবার গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন | ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এবার গণঅনশনে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবারে (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইয়াসের সরকার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের ২৩ জন শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের ৭৫ ঘণ্টা অতিবাহিত করলেও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এখনো পদত্যাগ না করে স্বপদে বহাল থেকেছেন। তাই আমরা সব শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভিসির পদত্যাগের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত গণঅনশন চালিয়ে যাবো।

ইয়াসের সরকার বলেন, ইতোমধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী গণঅনশনে নিজেদের নাম প্রস্তাব করেছেন। তারা হলেন—সামিউল সাফিন, ইফতেখার আল মাহমুদ, সামিরা ফারজানা।

আন্দোলকারী এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিনা উস্কানিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ করিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা যখন হাসপাতালে লাইন ধরছে, তখন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করেন। এই ঘটনার বানোয়াট মনগড়া বর্ণনা দেন। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় তিনি শিক্ষার্থীদের দায়ী করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে একেবারে শুরু থেকেই কোনো সন্দেহ নেই যে, ভিসি মিথ্যুক-নির্লজ্জ ও অযোগ্য ব্যক্তি!

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের আন্দোলনে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা অনশনের ঘোষণা দেয় এবং ২৩ জন শিক্ষার্থী ৭৫ ঘণ্টার বেশি সময় অনশনে থাকলেও এখন পর্যন্ত এই উপাচার্য পদত্যাগ করেননি।

ইয়াসের সরকার বলেন, এরইমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা সম্মত হলেও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেটে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ অবস্থা স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার অনুরোধ করেন। নয়তো অনলাইনে কথা বলার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ২১ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানানোর পরও এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ৭৫ ঘণ্টা টানা অনশন করে শিক্ষার্থীরা যখন মৃত্যু শয্যায়, তখনো ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নির্বিকার এবং তিনি পদত্যাগ করেননি। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে দেখে গণঅনশনে বসার সংকল্প নিয়েছে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে ভিসির পদত্যাগ করা, নয়তো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ভার উপাচার্যকেই নিতে হবে।

উপাচার্যের পদত্যাগপত্র স্বচক্ষে না দেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলবে। শর্ত মেনেই আমরা গণঅনশনে নামবো। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সিটে স্বাক্ষর করে গণঅনশনে বসতে পারবেন, বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইয়াসের সরকার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াসির সরকার জানান, অনশনে করোনা ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অংশ নেওয়া হবে। এছাড়া করোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ব্যতীত বহিরাগতদের না আসার অনুরোধ জানান তিনি।  

গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ আর সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর পৌঁনে ৩টা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। এখন পর্যন্ত ২৩ অনশনকারীর ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৭ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।