ঢাকা: কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের উদ্যোগে দুবাইয়ে চলমান আন্তর্জাতিক এক্সপোতে এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) রোসাটমের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ২০ জানুয়ারি দুবাইয়ে চলমান এক্সপো-২০২০ এ এসএমআর দিবস উদযাপন করে রোসাটম। ক্ষুদ্র মডিউলার রিয়্যাক্টরের সুবিধা এবং সারাবিশ্বে এর ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সংস্থাটি এই আন্তর্জাতিক ফোরামের আয়োজন করে।
রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ, ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক শামা বিলবাও ওয়াই লিওন, ইউএই এটমিক এনার্জি কর্পোরেশনের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল-হাম্মাদী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রুশ রাষ্ট্রদূত তীমুর জাবিরভ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অংশীদার কোম্পানির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কার্বনমুক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমআরভিত্তিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর সুবিধা নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়।
রোসাটমের মহাপরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, ‘শুধুমাত্র কপ-২৬ নয়, বরং ২০২১ সালে যতগুলো এনার্জি ও জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে মানুষ এখন বুঝতে পারছে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ছাড়া কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ’
প্যানেল আলোচনাকালে এক প্রশ্নের জবাবে আলেক্সি লিখাচোভ বলেন, ‘বৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুবিধা সুস্পষ্ট-উন্নত অবকাঠামো এবং বিপুল এনার্জি চাহিদা রয়েছে এমন দেশগুলোতে নির্ভরযোগ্য, নিরবচ্ছিন্ন এবং কম কার্বন নিঃসরণকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনে এগুলো অত্যন্ত উপযোগী। এসএমআরগুলোর ক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন। দূরবর্তী অঞ্চলে, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো, স্বল্প বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে এমন দেশগুলোতে এবং নির্দিষ্ট শিল্প প্রকল্পে (যেমন মাইনিং প্রকল্প) বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এসএমআর প্রযুক্তি সর্বাধিক উপযোগী। ’
তিনি আরও বলেন, এসএমআর প্রযুক্তির সুস্পষ্ট আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত এর উৎপাদন কমানো বা বাড়ানো, নির্মাণে কম সময় এবং স্বল্প স্টার্টআপ ব্যয়। ভৌগলিক কারণে যেসব এলাকায় বৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আর্থিকভাবে লাভজনক নয় বা নির্মাণ করা কঠিন, সে সব এলাকায় এসএমআর প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ করা যেতে পারে। আমার মনে হয় সারাবিশ্বের মানুষের কাছে, বিশেষ করে বর্তমানে প্রায় একশ কোটির অধিক মানুষের কাছে লো-কার্বন এনার্জি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালানো উচিত। ’
রোসাটমের ফার্স্ট উপ-মহাপরিচালক কিরিল কামারভ জানান, রাশিয়া শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবে এই এসএমআর প্রযুক্তি অফার করছে না। বরং ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির সাহায্যে দেশটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। উদাহরণস্বরুপ তিনি ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র অ্যাকাডেমিক লামানোসভের উল্লেখ করে বলেন, এটি ইতোমধ্যে দুই বছরের অধিক সময় ধরে রাশিয়ার চূকোতকা অঞ্চলের পেভেক শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। স্থলভাগে ইয়াকুতিয়ায় একটি এসএমআর এনপিপি নির্মাণের কাজ চলছে যা ২০২৮ সালে গ্রিডে যুক্ত হবে। কেন্দ্রটিতে আরআইটিএম-২০০ এন রিয়্যাক্টর ব্যবহৃত হবে।
ফোরামে আর্মেনিয়া, কিরগিস্থান, ফিলিপাইনের সরকারি এবং এনার্জি কোম্পানির প্রতিনিধি জানান কীভাবে এসএমআর তাদের বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছে। সেলিগডার কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন যে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটির এসএমআর ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে এবং পূর্ব অনুমেয় মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়েছে।
এসএমআর দিবসকে কেন্দ্র করে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও সম্পাদিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে এসএমআর ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সহযোগিতা সংক্রান্ত রুশ-কিরগিজ সমঝোতা স্মারক। রুসাটম ওভারসিজেরসঙ্গে আর্মেনীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সহযোগিতা চুক্তি এবং সেলিগডার মাইনিং কোম্পানির সঙ্গে অপর একটি সমঝোতা স্মারক।
বাংলাদেশ সময় ২০৩০, জানুয়ারি ২২, ২০২২
এসকে/এনএসআর