ঢাকা: রাজধানী ঢাকা রোববার একটি অস্থির দিন পার করল। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের অবরোধ-ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দিনে-রাতে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল শুরু হয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের অবরোধ-ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে। সকাল ১০টার দিকে তারা যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবরোধ শুরু করেন। এরপর তারা সেখানে বাসসহ বিভিন্ন গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।
বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অটোরিকশা চালকদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে তারা ব্যাপক জমায়েত করে বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাপ ছড়ায়। পরে তারা শহীদ মিনারে মিছিল নিয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত তাদের অবরোধে যানজটে নাকাল হয় মানুষ।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগে জড়ো হন একদল চাকরিপ্রার্থী। তারা সেখানে জমায়েত করলে শাহবাগে জটলা তৈরি হয়।
যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর মোল্লা কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ও টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভাঙচুর করে একদল শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় মাহবুবুর মোল্লা কলেজ, দনিয়া কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী হাসপাতালের সামনে জমা হয়। এ সময় তারা স্লোগানসহ হাসপাতালের নামফলক ও গেট ভাঙচুর করে।
বেলা আড়াইটার দিকে পুরান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ঘেরাওয়ে আসা শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে দুপুর ২টায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হওয়া।
পরে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছু হটলে অপরপক্ষের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ঢুকে পড়ে। এ সময় কলেজটিতে অনার্স প্রথম বর্ষের ইতিহাস পরীক্ষা চলছিল। কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া পরীক্ষা দুই ঘণ্টা চলার পর নিরাপত্তার স্বার্থে স্থগিত করা হয়।
এদিকে কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়ায় পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষের রুমসহ অধিকাংশ কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা একটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে, দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের কলেজের ট্রফি, চেয়ারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। পরে শিক্ষক ও স্টাফদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণ ছেড়ে দেন। এরপর কলেজে থাকা পরীক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে বের হয়ে যান।
সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলার প্রতিবাদে পার্শ্ববর্তী সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে এ হামলা করে কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজটির প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।
কলেজের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষসহ অন্তত ৫০টি রুমে ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্যান্টিনে হামলা করে টাকা লুট করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় তলার একটা শিক্ষক কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
কারওয়ান বাজার এলাকায় ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকার অফিসের সামনে বেশ কিছু লোক অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আসছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থানরত লোকজনকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চলে যেতে অনুরোধ করে। অবস্থানরত লোকজন সময়মতো স্থান ত্যাগ না করায় এক পর্যায়ে পুলিশসহ যৌথ বাহিনী অ্যাকশনে গিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
রাত ১০টার পর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার বিটাক মোড়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বুটেক্সের আজিজ হল ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথমে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর কয়েকদফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সবশেষ রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
** তেজগাঁওয়ে বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এমআইএইচ/এসআরএস