কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত সুড়ঙ্গের আদলে ১২ ফুট উচ্চতায় সৈকতের তীর ঘেঁষে তৈরি হবে ১২ কিলোমিটারের দৃষ্টিনন্দন সড়ক।
যেখানে থাকবে শপিংমল, উন্নতমানের রেস্তোরাঁ, কফিশপ, মালামাল রাখার লকার, ওয়াশরুম, চেয়ারে বসে কাচের জানালা নিয়ে সমুদ্র দেখাসহ বিনোদনের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
শুধু তাই নয়, সড়কের পশ্চিম পাশে বা সমুদ্রের দিকে থাকবে বাইসাইকেল ও পায়ে হাঁটার পৃথক রাস্তা। থাকবে সমুদ্রতলের প্রাণিজগতের রহস্য দেখার অ্যাকুয়ারিয়াম, সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। থাকবে বিনোদন পার্ক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালনের মুক্তমঞ্চ, বিদেশি পর্যটকদের অবকাশযাপনে পৃথক ব্যবস্থা। দিনের চেয়ে রাতের আলোয় ঝলমল সড়কটি পর্যটকদের বিমোহিত করবে।
দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটি তৈরি হলে কক্সবাজারের পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম এই সৈকতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাবে শত বছরের চেনাজানা সৈকতের পুরনো রূপও।
সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, বন, পর্যটন, পরিবেশ ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প অনুমোদনের পর এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে চার বছর।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১২ কিলোমিটারের সুড়ঙ্গ সড়কটি তৈরিতে ব্যয় হবে ২০৫১ কোটি ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
পাউবো কক্সবাজারের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বাংলানিউজকে বলেন, ২০৫১ কোটি টাকার এই সড়ক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত বছরের ৪ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে যাচাইবাছাই কমিটির সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে।
প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, কলাতলী মেরিন ড্রাইভ থেকে (বেইলি হ্যাচারির পাশ) শুরু হয়ে সৈকতের তীর ঘেঁষে হোটেল সায়মনের সামনে দিয়ে উত্তর দিকে সুগন্ধা, সিগাল, লাবণী, ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট হয়ে আঁকাবাঁকা পথে নাজিরারটেক পর্যন্ত যাবে ১২ কিলোমিটারের এই সুড়ঙ্গ সড়কটি। নাজিরারটেক অংশে যুক্ত হবে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংযোগ সড়ক। সৈকতের বালুচরে সৃজিত ঝাউবাগান ঠিক রেখেই সড়কটি তৈরি হবে।
নকশা থেকে দেখা গেছে, সড়কের মধ্যে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হবে মাল্টিফাংশনাল। এর মধ্যে কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকবে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত হবে ২ কিলোমিটার। সমতল থেকে সড়কটির উচ্চতা হবে ১২ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট। সুড়ঙ্গের আদলে তৈরি সড়কের দুই পাশে গাড়ি পার্কিং এবং ওয়াকওয়ে বাদ দিয়ে দুই লেনের সড়ক হবে ৩০ ফুট। দিনের বেলায় সৈকতের এমন রূপ মানুষকে যতটুকু মুগ্ধ করবে, রাতের আলোকোজ্জ্বল ঝলমলে সড়কটি আনন্দের মাত্রা বাড়াবে আরও কয়েকগুণ।
সড়কের পশ্চিম পাশে থাকবে ১০ ফুট প্রস্থের সাইকেল ওয়ে। ৯০-১০০ ফুট প্রস্থে থাকবে ওয়াকওয়ে, যেখানে লোকজনের হাঁটাচলার পাশাপাশি বিশ্রামের ব্যবস্থাও থাকবে। সেখানে বসানো হবে ৭০০টি চেয়ার। ওয়াকওয়ের সামনে (পশ্চিমে) বসানো হবে ছাতা-চেয়ার (কিটকট)।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বাংলানিউজকে বলেন, দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। সমুদ্র সৈকতের পর পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হবে সড়কটি।
সভাপতি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, বহুমুখী সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বেড়ে যাবে। তখন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারে অনেকগুলো মেঘা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো শেষ হলে আর সুড়ঙ্গের আদলে তৈরি এই সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের প্রতি মানুষের আগ্রহ হাজারগুণ বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এসবি/জেডএ