ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কলাবাগানে অধিগ্রহণ করা ১৬ একর জমি অবমুক্ত করবে সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
কলাবাগানে অধিগ্রহণ করা ১৬ একর জমি অবমুক্ত করবে সরকার

ঢাকা: ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কলাবাগানে ১৯৫৩ সালে অধিগ্রহণ করা বা নির্দেশিত ১৬ একর জমি আগের মালিকরা ফিরে পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ধানমণ্ডি মৌজার অধিগ্রহণ করা জমির জটিলতা নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ কথা জানান।

এ সময় ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার বা স্বার্থ সংরক্ষণ করা এই সরকারের অঙ্গীকার। জনস্বার্থ বিবেচনায় ইতোপূর্বে খাসমহাল সংক্রান্ত জটিলতা যা দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন ছিল, তা নিষ্পন্ন করা হয়েছে। অবমুক্ত প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয় এবং টাউট ও দালালরা যেন কোনও ধরনের হয়রানি না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আইনি জটিলতা থাকায় এসব জমির মালিকরা কিংবা তাদের ওয়ারিশরা ৭০ বছর ধরে জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না। এ কারণে তারা তাদের ভূ-সম্পদের আনুষ্ঠানিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ ব্যবহারও করতে পারছিলেন না। অবমুক্তের ফলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।  

প্রসঙ্গত, জমির মালিকরা এই জটিলতা নিরসনের জন্য ২০১৮ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হয়। পরে জটিলতা নিরসনে মন্ত্রিপরিষদ ভূমি মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়। এরপর গত বছরের ১ মার্চ ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উক্ত জটিলতা নিরসনে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কমিটির প্রতিবেদনসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সংস্থার মতামত পর্যালোচনা করে ভূমিমন্ত্রী ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা ও দখলে থাকা ১৪.০০৪৬ একর জমি আগের মালিকের অনুকূলে অবমুক্ত করা হবে বলে জানান। এছাড়া সিটি জরিপে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ড করা ২.৮৬৫৪ একর জমির মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের দখলে থাকা অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট জমি অবমুক্ত করার নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী।

জানা গেছে, ১৯৪৮-৪৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন নির্মাণকল্পে গণপূর্ত বিভাগের (তৎকালীন সিএন্ডবি) অনুকূলে রাজধানীর ধানমণ্ডিসহ আটটি মৌজায় মোট ৪৭২.৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৮ জানুয়ারি ১৯৫৩ সালে গেজেট প্রকাশনার মাধ্যমে অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয় এবং জমির দখল হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু প্রত্যাশী সংস্থা ধানমণ্ডি মৌজার সিএস ৬৭ নম্বর দাগের অধিগ্রহণ করা ১৬.৮৭ একর জমির মধ্যে ১৬.০৬ একর জমিতে কোনও সময়ে দখলে যায়নি। দীর্ঘদিন জমির পূর্ব মালিকরা ওয়ারিশ বা অন্যান্য সূত্রে এই জমিতে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ভোগ দখলে আছেন। ১৯৬৮ সালে সরকার ভূমি মালিকদের উচ্ছেদ নোটিশ করলে তারা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় লাভ করেন।

এছাড়া ১৪.০০৪৬ একর জমি সিএস, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে ব্যক্তির নামে এবং ২.৮৬৫৪ এর জমি সিটি জরিপে গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হয়। তবে এই জমির মধ্যে কিছু অংশ ব্যক্তির দখলে এবং কিছু অংশ গণপূর্ত বিভাগের দখলে আছে। এজন্য বিগত ৭০ বছর ধরে জমির মালিকরা এই জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (অধিগ্রহণ) মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শওকত হোসেন, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এবং গণপূর্ত বিভাগের আওতাভুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
জিসিজি/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।