ঢাকা: সাইনবোর্ড ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তেঁতুলতলা মাঠ দখলে নিয়েছে কলাবাগান থানা পুলিশ। শুধু তাই নয়, ওই মাঠে খেলতে যাওয়া শিশুদের নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, খেলতে যাওয়া শিশুদের কান ধরে উঠবস করিয়েছে কলাবাগান থানা পুলিশের সদস্যরা। আর তার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারন করে ওই মাঠে পুনরায় খেলতে যেতে শিশুদের নিষেধ করা হয়। কোমলমতি শিশুদের ওপর পুলিশের এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় যে পুলিশ সদস্যরা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৩১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওইদিন দুপুরেই থানা পুলিশের ১০-১২ জন সদস্যের উপস্থিতিতে মাঠের চারপাশে তারকাঁটার বেড়া দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মঙ্গলবার পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় শিশুরা খেলা থামায়নি। সেদিন রাতে ওই শিশুদের খুঁজে বের করে মাঠের সামনে এনে কান ধরে উঠবস করায় পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া ওই শিশুরা যাতে মাঠে আর খেলতে না যায় সেজন্য নির্যাতনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারন করে হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ঘটনায় শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসক আদালতের মাধ্যমে এই মাঠটি পুলিশের কাছে দিয়েছে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য মাঠে খেলার জন্য শিশুদের নির্যাতন করে থাকে তথ্য প্রমাণ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
ক্ষুব্ধ শিশুরা বাংলানিউজকে জানায়, মঙ্গলবার থেকে তারা ঘরে বসে অলস সময় পার করছে। ইচ্ছে করলেও মাঠে যেতে পারছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, তেঁতুলতলার মাঠ শুধু শিশুদের খেলার জন্য নয়, সেখানে ঈদের জামাতও অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এলাকার কেউ মারা গেলে তাদের গোসল ও মরদেহ রেখে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়। সবমিলিয়ে মাঠটি এলাকাবাসীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কলাবাগান থানা পুলিশ এই মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিসে বলা হয়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ওই নোটিসে এই জমিকে পতিত জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ওই নোটিসের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী ও শিশু-কিশোররা এই নোটিসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ জায়গার প্রকৃত মালিক মুক্তিযুদ্ধের পর আর দেশে ফেরেননি। তাই ওই জমি পতিত হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
এসজেএ/এনএসআর