ঢাকা: ঈর্ষান্বিত হয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ টিভির উপস্থাপক ও সাংবাদিক নাজনীন আক্তার ওরফে নাজনীন মুন্নীর মিথ্যা অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় যুবদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই কর্মী নুর হোসাইন নুরু ও সজীব মিয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিক নাজনীনের দায়ের করা পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামির মধ্যে নুর হোসাইন নুরু চট্টগ্রামের হালিশহর যুবদলের সক্রিয় কর্মী এবং সজীব মিয়া রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্র অধিকার পরিষদের সক্রিয় একজন কর্মী।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি জানায়, ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময় ও যুবদল সিনিয়র নেতার নির্দেশে নুর ও সজীব ফটোশপে এডিট করা নাজনীনের মিথ্যা অশ্লীল ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী উপস্থাপক ও সাংবাদিক নাজনীন মুন্নীর অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে নুর হোসাইন নুরু ও নরসিংদী থেকে সজীব মিয়াকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো.আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বিষয়টি নাজনীন মুন্নীর নজরে আসলে এ বিষয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়- একটি মৌলবাদী সম্প্রদায় ও কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে চেহারার কিছু অংশ ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে নগ্ন ও অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগে তিনি আরও বলেন, 'নুর হোসাইন নুরু' (https://www.facebook.com/nurhossain.nuro.3) নামে একটি ফেসবুক আইডিসহ আরও একাধিক ফেসবুক আইডি ও ব্লগ থেকে তার এই ভিডিও ছড়িয়েছে দেওয়া হয়েছে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গুলশান থানা পুলিশ তদন্ত করে একটি ফেসবুক আইডি ও একটি ব্লগ থেকে এই অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ পায়। এরপর আইডি ও ব্লগের মালিককে শনাক্ত করে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া দুই আসামির মধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহর থানার যুবদলের কর্মী নুর হোসাইন নুরু এবং রাজধানীর সবুজবাগ থানার ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী সজীব মিয়া।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে তারা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা 'জনগণের মুখোমুখি' নামে একটি ব্লগকে শনাক্ত করতে পারি। এই ব্লগটি থেকেও মুন্নীর ছবি এডিট করে বানানো অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ব্লগটির মালিক হচ্ছেন সজীব মিয়া।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর স্বীকার করেছেন, তার ফেসবুক থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। সে বলেছে তার সিনিয়র এক যুবদলের নেতা তাকে এই ভিডিওটি পোস্ট করতে বলেছিলেন। সেই নেতার আদেশে ভিডিওটি সে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এই সিনিয়র নেতার আদেশে সে ফেসবুকে সরকার বিরোধী বিভিন্ন মিথ্য পোস্টও দিয়েছে।
ডিসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব মিয়া জানায়, সে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির একজন কর্মী। সংগঠনের সবুজবাগ থানার সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়ের কাছ থেকে এই ভিডিও পেয়েছেন। তার নির্দেশেই সে ভিডিওটি তার ব্লগে পোস্ট করেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নুর ও সজীবকে গ্রেফতারের পর আমরা শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠিয়েছি। তাদের রিমান্ড মঞ্জুর হলে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য আমরা জানতে পারব।
তিনি বলেন, নুরের সিনিয়র যুবদল নেতা ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়কে গ্রেফতার করতে চেষ্টা চলছে। যেহেতু এই দুই জনের নির্দেশে তন্ময় ও সজীব ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে, সেহেতু তাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভিডিওটি কী উদ্দেশ্যে তারা ভাইরাল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তা জানা যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে মুন্নীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অশ্লীল ও নগ্ন ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতাররা সরকার বিরোধী চক্র। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন আইডিতে নিয়মিত সরকার বিরোধী পোস্ট দিয়ে আসছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি প্রথম পোস্ট হয়েছে নূরের মাধ্যমে। তাদের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করা গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এসজেএ/এমএমজেড