ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাহাজ থেকে নামলে ক্রুদের ঝুঁকি বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
জাহাজ থেকে নামলে ক্রুদের ঝুঁকি বাড়বে: প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: ইউক্রেনে রকেট হামলার শিকার ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে ২৯ বাংলাদেশি ছিলেন বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এখন বাকি যে ২৮ জন আছেন, তারা যদি জাহাজ থেকে নেমে যান তবে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

ইউক্রেনে আটকে পড়া জাহাজটিতে বুধবার রকেট হামলার পর নাবিক হাদিসুর রহমান মারা যান। বাকিরা নিরাপদে দেশে ফিরতে আকুতি জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আসলে আমরা খুবই একটা নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। কারণ, আমাদের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ওখানে আটকে পড়া অবস্থায় আছে। এটা যেহেতু একটা বাণিজ্যিক জাহাজ, এটা যুদ্ধ ক্ষেত্রের বাইরে থাকার কথা। বন্দরের মধ্যে মাইন সেট করার কারণে চ্যানেলটা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে যে পাইলটিং করে, সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে সেটা আটকে গেছে।

তিনি বলেন, এই অবস্থায় আমরা সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখছিলাম। আমাদের জাহাজে এক মাসের উপরে খাবার মজুদ ছিল। কিন্তু গতকাল রাতে যখন আমরা সংবাদটা পাই, সেখানে মিসাইল হামলা হয়েছে। জাহাজের ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরপরই খবর পেলাম থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মিসাইলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকি ক্রুরা ফায়ার ফাইটিংয়ের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জাহাজ এখন চলাচল করা সম্ভব নয়। তবে জেনারেটরসহ বাকি সব সুবিধা আমাদের ক্রুরা পাচ্ছেন। তবে সেখানে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে, এটা স্বাভাবিক। সেখানে যুদ্ধ চলছে, তারা যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়েছেন। তারা চলাচল করতে পারছেন না, এরমধ্যে সেখানে মিসাইল হামলা হয়েছে।

খালিদ মাহমুদ বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে আমাদের পোল্যান্ডের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে, জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও চাচ্ছেন তাদের একটা নিরাপত্তা। যদি জাহাজ থেকে নেমে যায় তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে আরও নিরাপদ রাস্তা বের করতে পারি। কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। তাহলে হয়তো তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা মারা যাওয়া হাদিসুর রহমানের মৃতদেহ জাহাজেই সংরক্ষণ করছি। এখন যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করে। রাশিয়া, ইউক্রেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রেডক্রসের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। জাহাজটি যদি আমরা পুরোপুরি ছেড়ে দেই তবে অন্য একটি সম্ভাবনা থেকে যায়।

খালিদ মাহমুদ বলেন, আমরা সবকিছু বিবেচনায় জাহাজের ক্রুদের জীবনের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। জাহাজের ভেতরে থেকেই তারা নিরাপদ থাকতে পারেন। তবে যুদ্ধটা কোন পর্যায়ে যাবে, আমরা তো জানি না। আমি বলেছি, তাদের নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। খুব আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত হয়ে গেলে ভুল সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিএসসি ও ডিপার্টমেন্ট অব শিপিংয়ের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বলেছি।

টার্গেট করে হামলা!
ক্রু-নাবিকদের নিরাপত্তা দিতে পোল্যান্ড দূতাবাসকে অনুরোধ জানাতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নৌ মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তো নিরাপদেই ছিলেন। যখন ২৩ তারিখে সেটা আটকে যায় তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তারা সেখানে নিরাপদেই ছিলেন, জাহাজের মধ্যে ক্রুরা ছিলেন।

তিনি বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটে গেছে, এখন যেটা মনে হচ্ছে সেটা তো একটা টার্গেট করেই হামলা হয়েছে—এরকমই মনে হচ্ছে ছবি দেখে। আমরাও সেটা জেনেছি, যারা এক্সপার্ট আছেন, তাদের কাছেও এটা জেনেছি যে, এরকম একটা অবস্থা (টার্গেট করে হামলা) হয়েছে।

যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়লে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করেছেন কিনা, চিন্তাভাবনা করছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের নির্মমতার শিকার তো বাংলাদেশের মানুষ। যেখানে মানুষ ধর্ষিত হয়েছে, মারা গেছে, শিশুদের মারা হয়েছে, নারীদের মারা হেয়েছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুণ্ঠন করা হয়েছে। এগুলোর শিকার আমরা। আমরা দেখি রণক্ষেত্রে মানা হয় না। বিভিন্ন দেশে যে যুদ্ধ হচ্ছে, আমরা দেখি সেগুলো মানা হয় না। সেখানে সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, হাসপাতালে হামলা হচ্ছে, শিশুরা মারা যাচ্ছে, সাংবাদিকরা মারা যাচ্ছে। এখানেও তো আমাদের যে বাণিজ্যিক জাহাজ সেটাও তো যুদ্ধ ক্ষেত্রের আওতার মধ্যে পড়ার কথা না। কিন্তু আমরা তো আক্রান্ত হয়ে গেলাম। এগুলো পরবর্তীতে হয়তো যখন স্বাভাবিক হবে তখন এগুলোর বিষয় নিয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারবো। আমাদের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে যত যোগাযোগ বা কথা বলা দরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেগুলো চলমান আছে।

জাহাজে রাশিয়ার এই হামলাকে নিন্দা করেন কিনা—প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, না। এখনও আমরা ঠিক কনফার্ম না, হামলাটা যুদ্ধের মধ্যে হয়েছে। কোন মিসাইল, কারা করেছে আমরা এখনও কনফার্ম হতে পারিনি। যুদ্ধের মিসাইলে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু কোন মিসাইলে আক্রান্ত হয়েছে, সেটা বলতে পারি না। আমরা যখন জানবো কারা হামলা করেছে তখন আমরা সেটার ব্যাপারে কথা বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।