ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সা‌দিয়া‌কে হত্যার অ‌ভি‌যোগ প‌রিবা‌রের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২২
সা‌দিয়া‌কে হত্যার অ‌ভি‌যোগ প‌রিবা‌রের

বরিশাল:  বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার সাথী আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

ব‌রিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি ম‌ডেল থানায় লিখিত অভিযোগে এমন দাবি করেছেন নিহতের বাবা সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত দেননি। বলেছেন পরে জানাবেন।

নিহতের বড় বোনের স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী জানান, সাদিয়া আক্তার সাথীর আত্মহত্যার কোন কারণ নেই। কিছুদিন আগে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাদিয়ার স্বামী মাইনুল ১৩ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পরে চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চায় সাদিয়া। প্রথমাবস্থায় ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন অর্থাৎ রোববার (৬ মার্চ) মাইনুল বাসায় এসেছিল।

তিনি বলেন, সাদিয়ার মেয়ে সাইমুন আমাদের জানিয়েছে, মাইনুল এসে ঝগড়া করে এবং সাদিয়াকে মারধর করে। তাছাড়া মাইনুলই আমাদের সবাইকে কল করে জানায় সাদিয়া আত্মহত্যা করেছে। এমনকি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসার জন্য এক রিকশায় উঠেও মাঝপথে নেমে গিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, মাইনুল যদি ওই সময়ে অফিসে থাকে তাহলে সে কীভাবে জানল সাদিয়া বাসায় আত্মহত্যা করেছে? আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক।

তিনি আরও বলেন, মর‌দেহ উদ্ধারের সময়ে কোতয়ালী থানার এসআই রেজা সাদিয়ার লেখা একটি ডায়রি, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন। সেগুলোতে কী আছে তা আমরা দেখতে চেয়েছি, কিন্তু তিনি কিছুই দেখাননি।

বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাদিয়া আত্মহত্যা করলে ওর ফ্লাটের দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকার কথা। কিন্তু পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা পেয়েছি। এটি যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমি মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। যদি আত্মহত্যা করতো তাহলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসতো কেন? আমার ধারণা সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল সাদিয়া। তখন তাকে নির্যাতন ও মারধর করে হত্যার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, সাদিয়ার সঙ্গে স্বর্ণালী নামে আরেক মেয়ে সাবলেট থাকতো। ঘটনার পর তাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।

এদিকে মর‌দেহ উদ্ধারকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি সাদিয়া সাথির স্বামী চাকরি করেন। কিন্তু কোথায় চাকরি করেন তা জানতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে জানতে পেরেছি মাইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেন।

জানা গেছে থানায় লিখিত অভিযোগে সাদিয়ার বাবা উল্লেখ করেন, এক বছর আগে প্রেমের সর্ম্পকের সূত্র ধরে সাদিয়া সাথীর বিয়ে হয়। এরপর তারা বরিশালেই বাসা ভাড়া করে থাকতো। সাদিয়াকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছে স্বামী মাইনুল। সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় তাকে নির্যাতন করা হতো। এর আগে মাইনুলের নির্যাতনে কয়েকবার সাদিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার নির্যাতন করে হত্যার পর মর‌দেহ ঝুলিয়ে রেখেছে। অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বাদুরী গ্রামের সোহরাব ফরাজীর ছেলে।

কোতয়ালি ম‌ডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম লিখিত অভিযোগের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সাদিয়ার পরিবার তাদের অভিযোগের বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়েছে। তবে আমরা অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়ায় ডা. শাহজাহান হোসেনের বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্লাট থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ৮ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। জানা গেছে, মেয়েটি তার প্রথম সংসারের সন্তান।

বাংলা‌দেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, ৯ মার্চ, ২০২২
এমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।