বরিশাল: প্রেমের টানে সুদূর জার্মানি থেকে বরিশালে ছুটে আসেন আলিসা থেওডোরা পিত্তা। জামার্নিতে বরিশালের ছেলে রাকিব হোসেন শুভর সঙ্গে পরিণয়ের পর বিয়ে হয় তার।
ইতোমধ্যে শ্বশুরবাড়ির আথিতেয়তায় বেশ খুশি আলিসা। পরিণত হয়েছেন সবার মধ্যমণিতে। তার প্রতি আদর-যত্নের কমতি রাখছেন না প্রতিবেশীরাও।
বুধবার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়ার উলাল বাটনা এলাকার হাফিজ মেম্বারের বাড়িতে আলিসার গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজন ঘিরে বাড়ির দুইপ্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক জুড়ে বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বসানো হয় তোরণও। অন্যদিকে বাড়ির পাশের মাঠে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে অনুষ্ঠানে আগতদের ধর্মীয় রীতিতে সালাম দিচ্ছিলেন আলিসা। কয়েকটি বাংলা শব্দ বলতে পারেন তিনি। এর মধ্যে থেকে ‘ভালো’ ও ‘ধন্যবাদ’ ব্যবহার করছিলেন, যা শুনে সবাই মুগ্ধ হচ্ছেন।
বাংলানিউজকে আলিসা বলেন, বাংলাদেশটা খুব ভালো লেগে গেছে। বিশেষ করে এখানকার মানুষ খুব আন্তরিক। এখানকার পোশাক-খাবার ভালো লেগেছে। আর বুধবার সন্ধ্যায় আয়োজিত হলুদ অনুষ্ঠানে তিনি রীতিমত মুগ্ধ।
আলিসা ও তার পরিবারের সঙ্গে জার্মানি থেকে আসা জেনিফা বলেন, এখানকার আবহাওয়া খুব ভালো। সবসময় বাইরে যাওয়া যায়। আর লোকজন খুব আন্তরিক।
আলিসার শ্বশুর শহিদুল ইসলাম চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ও তার স্ত্রী নাসরিন জাহান মুন্নী বলেন, ছেলের বউয়ের ব্যবহারে আমরা খুব খুশি। বিশেষ করে আলিসা যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এতে আমরা আনন্দিত। সে ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের কবর জেয়ারত করেছে। বাংলা খাবার খাচ্ছে। সবার সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশছে।
পারিবারিকভাবেই শুভ-আলিসার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি সন্তানও রয়েছে। বর্তমানে শ্বশুর-শাশুড়ি চেষ্টা করছেন ছেলে বউ ও নাতিকে সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিতে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা শুভকে ছোটবেলায় বিদেশি বলতো। সে কথা বাস্তবে ধরা দিল। বিয়ের পর ছেলে ও তার বউকে দেখতে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। তখন বউমা আমাকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের খাবার খাইয়েছে। বিশেষ করে আলিসার মা তো রীতিমত আস্ত খাসি রান্না করে আমাকে আপ্যায়ন করেছেন।
শুভর বোন ছাদিয়া ইসলাম যুথী জানান, ভাইয়ের জার্মান স্ত্রীর সঙ্গে তার সময় খুব ভালো কাটছে। ভাবিকে নিয়ে আশপাশের এলাকায় ঘুরছেন তিনি, ছবিও তুলছেন। তার সঙ্গে আসা জেনিফাও খুব ভালো।
শুভ বলেন, বাংলাদেশে পরিবার নিয়ে আসতে পেরে ভালো লাগছে। আমি একার সিদ্ধান্তে আসিনি। আলিসা নিজ থেকে আসতে চেয়েছে। ওর খুব আগ্রহ ছিলে আমার পরিবারকে দেখার।
এলাকাবাসীর বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের দেখতে আসছেন, দোয়া করছেন। পরিবারের পাশাপাশি তারাও আদর-যত্নের কমতি রাখছেন না।
জার্মানির জীবন নিয়ে শুভ বলেন, দুজনে একই জায়গায় পড়াশোনা করেছি, সেখান থেকে পরিচয়। এরপর প্রণয় ও পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আলিসা জার্মান ভাষায় কথা বলে। বাংলাও পারে, তবে অল্প। আমাদের ছেলে যেন বাংলাটা বলতে পারে সেই চেষ্টা করছি। আমিসহ জার্মানিতে থাকা বন্ধুরা ওর সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলে। চিন্তা করছি, এখন থেকে প্রতি দুই বছরে পরিবার নিয়ে দেশে আসবো।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (০৪ মার্চ) বিকেলে জার্মান নারী আলিসাকে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শুভ। শনিবার (০৫ মার্চ) সকালে হেলিকপ্টার চেপে বরিশালে আসেন তারা। বিদেশি বউ নিয়ে আসার খবর পেয়ে দলবেঁধে তাদের দেখতে আসে গ্রামবাসী। পরে নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শুভর স্বজনরা।
২০১১ সালে রেলওয়ে ডিপ্লোমা পাস করে জার্মানিতে পাড়ি জমান শুভ। সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। অপরদিকে আলিসা পেশায় নার্স। তার মা-বাবাও সেখানেই কাজ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২২
এমএস/এনএসআর