রাজশাহী: সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনী ইশতিহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি এক অর্থে জনগণের সাথে সরকারের চুক্তি। তবে এই চুক্তি বস্তুত একটি লিখিত চুক্তি, এটি স্বাক্ষরিত নয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করে এবং প্রকাশ করে। সেই নির্বাচনী ইশতেহারের ভিত্তিতে তারা অঙ্গীকার করে যে, আগামীতে তারা কীভাবে সরকার পরিচালনা করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর আর সেই নির্বাচনী ইশতেহার কেউ বাস্তবায়ন করে না। এটি শুধু প্রণয়নের জন্যই প্রণয়ন করা হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ডের সহায়তায় রাজশাহীর গ্র্যান্ড রিয়ারভিউ হোটেল মিলনায়তনে শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘জাতীয় উন্নয়নের অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন, কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সংলাপে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ২০০৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই বছর নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। সেই নির্বাচনী ইশতেহারের বিখ্যাত নাম দেওয়া হয়েছিল। নামটা কি আপনাদের মনে আছে? হ্যাঁ, তা ছিল দিনবদলের সনদ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সেই দিনবদলের সনদ সত্যিকার অর্থেই দিনবদলের একটি যুগান্তকারী সনদ ছিল। ওই সনদে আমি নিজেও ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছিলাম। আমি মনে করেছিলাম, এই নির্বাচনী সনদ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আমাদের সুজনের কার্যক্রম বোধহয় আর পরিচালনা করতে হবে না। দিনবদলের সেই সনদ পর্যালোচনা করে তরুণরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই দলটিকেই তারা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। তাই নির্বাচনী সনদ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তখন আমি তা আরও ভালো করে উপলব্ধি করলাম। এটি একটি দলের পক্ষে মানুষকে নেওয়ার ব্যাপারে; জনমত তৈরির ব্যাপারে কত যে, গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু নির্বাচনের পর কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা আপনারাই ভালো জানেন।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, এরপরও নির্বাচনী ইশতেহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জনগণের কাছে একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আজকে আলোচনার মাধ্যমে আপনারা বলতে পারবেন এর কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কতটুকু বাস্তবায়িত হয়নি। সেটুকুর জন্য নাগরিক হিসেবে আপানাদের যে ভূমিকা আছে—চাপ সৃষ্টি করা, সোচ্চার হওয়া তাদের দায়বদ্ধ করা; সেটা করবেন। আমরা চাই যারা যেই অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় গেছে, তারা যেন তা বাস্তবায়ন করে। মানুষের যেন কল্যাণ হয়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মমর্যাদাপূর্ণ দেশ সৃষ্টি করতে চাই।
সিপিডি ও সুজনের যৌথ এই সংলাপে শিক্ষা, শোভন, কর্মসংস্থান ও জেন্ডার সমতা নিয়ে আলোচনা হয়। এই খাতগুলো নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অর্জন এবং খাতগুলোর উন্নয়নের জন্য সামনের দিনগুলোতে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়।
সংলাপে সাবেক সংসদ সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এসএস/এমজেএফ