ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মাছ ধরতে হারি না, এক্কারে মইরা যাইতাছি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
‘মাছ ধরতে হারি না, এক্কারে মইরা যাইতাছি’

চাঁদপুর: ‘১ তারিখ থেইকা জাল বাওন বন্ধ থাকায় সংসার চলে না। মাছ ধরাই আমার পেশা।

আর কোন কাম নাই, আমি অন্য কোন কামও জানি না। এদিকে খাল আটকাইয়া থুইছে। এহন জাল বায়নের কোন সুযোগ নাই। নদীতে যাইতেও হারিনা, মাছও ধরতে হারিনা, আমি এক্কারে মইরা যাইতাছি। ’

মাছ ধরতে না পেরে এভাবেই কষ্টের কথাগুলো প্রকাশ করেন চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে হাফেজ হাওলাদার (৬০)।

ছোট বেলা থেকেই তিনি পদ্মা-মেঘনায় মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে পারছেন না।

তিনি বলেন, বউ পোলা মাইয়া লইয়া কেমনে চলুম। আমাগ জন্য কোনো ব্যবস্থা নাই। যে চাল দেয়, তার চাইতে অন্য খরচ বেশি।

সম্প্রতি গোবিন্দিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী হরিণা ফেরিঘাটের উত্তরে মেঘনা পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে বহু জেলে তাদের জাল মেরামত করছেন। আবার কেউ নৌকা মেরামত করছেন। এদের মধ্যে নৌকা জালের মহাজন বাসানি মিজি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমরাতো সরকারের অভিযান মানি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জ, বাহাদুরপুর ও এখলাসপুরের শত শত জেলে আমাদের এলাকায় এসে জাটকা ধরে। তাদের দেখায় আমাদের এলাকার কিছু মৌসুমী জেলেও জাটকা ধরে। বহিরাগত জেলেদের আসা প্রশাসনকে বন্ধ করতে হবে। তাহলে জাটকা রক্ষা হবে।

একই নৌকায় মাছ ধরেন আবদুল হালিম সৈয়াল ও দেলোয়ার হোসেন।

তারা বলেন, সরকার বিজিএফের যে চাল দেয়, তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না। অভিযানের আগে ঋণের কিস্তি দিতে পারছি। কিন্তু এখন কিস্তিও দিতে পারব না। এরপর আবার সংসার চালানো খুবই কষ্টদায়ক। কারো কাছে চাইব, তাও পারছি না। সবারইত একই অবস্থা। আমাদের দু:খ-কষ্টের কথা কেউ শুনতে আসে না।

সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন চান্দ্রার মৎস্য আড়ৎ আখনের হাট।

সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ মাছ ধরার বহু নৌকা ডাঙায়। কেউ কেউ নৌকা এবং জাল মেরামত করছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বার লোক দেখানোর জন্য খালের মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন। রাতের অন্ধকারে ঠিকই নৌকা নিয়ে জাটকা ধরে এক শ্রেণির জেলে। নৌ পুলিশ তৎপর হলে কেউ জাটকা ধরতে পারবে না।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গেলাম মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, জেলেদের জন্য সরকার যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবে। অনেক ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বিতরণ হয়েছে। তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্সাবনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ দিচ্ছি। যাতে করে তারা মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে সংসার চালাতে পারে। ৪৪ হাজার জেলে একসঙ্গে পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, জেলেদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থা থেকে ঋণ উত্তোলন করেছেন। এ বিষয়টিও আমরা জানি। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ সময়ে তাদের ঋণের কিস্তিগুলো সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।