ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আড়াইশ’ মিটার দূরে ২ সেতু, পাশেই হচ্ছে আরেকটি!

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
আড়াইশ’ মিটার দূরে ২ সেতু, পাশেই হচ্ছে আরেকটি!

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি সেতু থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। অথচ নির্মাণাধীন ব্রিজের উভয় পাশে চলাচলের কোনো সড়কই নেই।

 

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জোয়াড়ী বাজার সংলগ্ন জোয়াড়ী ও নটাবাড়িয়া মণ্ডলপাড়ার মধ্যবর্তী বড়াল নদীতে বিপুল টাকা ব্যয়ে এমন অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।  

অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ বন্ধের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বড়াইগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে জোয়াড়ী এলাকায় ৫০ ফুট দীর্ঘ একটি ফুটওভার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দে নওগাঁর ঠিকাদার মসলেম উদ্দিন সেতুটির নির্মাণ কাজ করছেন।  

ওই সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এরই মধ্যে সেতুটির বেইজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এক পাশে কিছু ইট, পাথর, বালু ও সিমেন্ট জড়ো করে রাখা হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর উত্তরাংশে পায়ে হাঁটা একটি সরু সড়ক থাকলেও দক্ষিণাংশে কোনো সড়কের অস্তিত্ত্ব নেই। এক পাশে প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে অর্ধশত বছরের পুরনো আম বাগানসহ নদীর তীর ঘেঁষে কলাবাগান ও কয়েকটি পরিবারের বসত বাড়ি রয়েছে। অথচ এমন সড়কবিহীন স্থানে চলছে সেতু নির্মাণ কাজ।  

স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বাংলানিউজকে জানান, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে, তার উভয় পাশে মাত্র আড়াইশ’ মিটার দূরে জনসাধারণের চলাচলের জন্য দু’টি সেতু রয়েছে। অথচ এখানে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এমন আরেকটি সেতু এখানে নির্মাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।  

নটাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রবিউল করিম বলেন, পাশাপাশি দু’টি সেতু থাকার পরও অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাবিহীন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে কেউ রাস্তাও দেবে না। ফলে এ সেতু নির্মাণ সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই না।  

এ ব্যাপারে বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষের বড়াইগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, নদীর দক্ষিণ পাশে সড়ক না থাকলেও উত্তর পাশে রয়েছে। জনগণের স্বার্থেই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সেজন্য এ ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যদি স্থানীয়রা সেতু না চান, তাহলে তা করা হবে না।  

বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষের নাটোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিবাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এ ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ সেতু নির্মাণের পক্ষে, সে বিবেচনায় ওই স্থানে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সেতুটি হলে মানুষ ও গরু-ছাগল পারাপার এবং কৃষি জমি থেকে ফসল সহজেই আনা-নেওয়া করা যাবে। অথচ স্থানীয় দুই ব্যক্তি এ সেতু নির্মান বন্ধে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। কারণ তারা তাদের আম বাগান রক্ষার জন্য এমনটি করছেন। সেতুটি হলে ওই আম বাগান কিছুটা ব্যবহার হবে। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়াম খাতুন বাংলানিউজকে জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।