ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে হাট বাজারে কয়েকগুণ রাজস্ব আদায়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২২
বাগেরহাটে হাট বাজারে কয়েকগুণ রাজস্ব আদায়

বাগেরহাট: বাগেরহাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে সরকারি রেটের কয়েকগুন খাজনা আদায় করছেন ইজারাদাররা। ইজারাদারের চাপের মুখে ক্রেতা-বিক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত খাজনা দিতে।

এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ছে। এছাড়া সরকারি খাজনার (টোল) রেট হাট-বাজারের প্রক্যাশ্যে টানানোর কথা থাকলেও জেলার বেশিরভাগ হাটে তা নেই। এর ফলে ইজাজারাদার ও খাজনা আদায়কারীরা ইচ্ছেমত শোষণ করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

রোববার (০৬ এপ্রিল) কচুয়া উপজেলার সব থেকে বড় বাজার বাধাল হাটে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি টোল নির্ধারণ করা কোনো রেট চার্ট নেই সেখানে। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি রেট সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। খাজনা আদায়কারীরা যে পরিমাণ টাকা চায় সেই, টাকা দিতে হয় তাদের।

এই বাজারে খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিটি গরু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, ছাগল বিক্রির ওপর শতকরা ৯ টাকা, হাঁস-মুরগি শতকরা ৭ টাকা, মাংসের দোকান-৩০০ টাকা, কাঁচামাল-সবজি বিক্রেতা চট প্রতি ১২০-২০০ টাকা, তরমুজ ২৫০ টাকা, কাপড় ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মশলা ৫০-৮০ টাকা, ভ্রাম্যমাণ খাদ্য পণ্য ৬০ টাকা, মাছ ১২০ টাকা, মিঠা ৫০ টাকা, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি-ঝাঁকা ২০-৩০ টাকা, পান ২০০ টাকা, গুড় (মিঠা) ৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়। এর বাইরে পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতিহাটে বিপুল পরিমাণ খাজনা তোলা হয়।

এর বিপরীতে জেলা প্রশাসন নির্ধারিত সরকারি রেট ছাগলে ক্রয় মূল্যের ৫ শতাংশ, মাংসের দোকান প্রতি ১০ টাকা, পান ৬ টাকা, মশলা ৭ টাকা, তরমুজ ও অন্যান্য ফল ৫ টাকা, গুড়-মিঠা ৬ টাকা, ২ টাকা, ক্রেতা ২ শতাংশ, কাঁচামাল-সবজি ৬ টাকা, মশলা দোকান প্রতি-৭ টাকা রয়েছে। সরকারি রেটের অতিরিক্ত এতো বেশি খাজনা আদায় করলেও যেন দেখার কেউ নেই।

বাধাল বাজারে নিয়মিত কাঁচামাল ব্যবসায়ী রাজিব তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ৩-৪ হাত জায়গায় ছালার চট বিছিয়ে বসলেই ১২০ টাকা দিতে হয়। অনেক সময় ২০০ টাকাও দিতে হয়। আর না দিলে আমাদের বসতে দেওয়া হয় না।

জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, শুনেছি হাটে খাজনা দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি রেট রয়েছে। কিন্তু আমরা কোনোদিন সরকারি রেট সম্পর্কে জানিনা, দেখিওনি। জানতে চাইলে অনেক খারাপ ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে ইজারাদারের লোকেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি হাটবাজারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীরা ইজারা নেয়। এর ফলে তারা তাদের ইচ্ছে মতো জোরজবদস্তি করে খাজনা আদায় করে। সেক্ষেত্রে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা সরকারি রেট দেখার কথা বললে মার খেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হয় আমাদের।

শুধু বাধাল নয়, কচুয়া, সাইনবোর্ড, গজালিয়া, মোরেলগঞ্জে দৈবজ্ঞহাটি, কালিকাবাড়ি, সন্যাসি, মোরেলঞ্জ, সদর উপজেলা যাত্রাপুর, মাদরাসা বাজার, বাগেরহাট শহরের কাঁচা বাজারসহ জেলার ১৫৪টি হাটের বেশিরভাগ হাটে একইভাবে বেশি খাজনা আদায় করা হয়। একই পণ্যের বারবার খাজনা আদায়ের ঘটনাও রয়েছে। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।

বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নীহার রঞ্জন সাহা বলেন, হাট-বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে সরকারি কোনো তদারকিও নেই। ১৩ মার্চের জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। অতিদ্রুত প্রতিটি হাটে সরকার নির্ধারিত রেট টাঙিয়ে দিয়ে সহনীয় পর্যায়ের খাজনা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ার বিষয়ে নানা অভিযোগ এসেছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সরকারি খাজনা নির্ধারণ করা হবে। যাতে ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউ ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে বিষয় চিন্তা করে নতুন রেট নির্ধারণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।