ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের লাশ দাফন হলেও চিকিৎসকের মামলা থেকে রক্ষা পায়নি ছেলেরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
মায়ের লাশ দাফন হলেও চিকিৎসকের মামলা থেকে রক্ষা পায়নি ছেলেরা

খুলনা: সড়ক অবরোধের ফলে দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা পর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিয়ারুন্নেছার (৫৫) মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। সেই সঙ্গে থানায় আটক তার দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ।

রোববার (১০ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দিলেও বিকেল ৫টায় ডাক্তারদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় মৃত পিয়ারুন্নেছার অপর দুই ছেলেকে আসামি করা হয়। ফলে মায়ের মরদেহ দাফন করতে পারলেও শোক প্রকাশের সুযোগ না পেয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার (১১ এপ্রিল) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব দাস বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রীতম কর্মকার বাদী হয়ে রোববার বিকেল ৫টায় মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের দুই ছেলে মো. রবিউল ইসলাম (২২) ও মুস্তাকিমকে (২০) আসামি করে মামলা করেছেন (মামলা নং-৭)। মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন আসামিদের মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের জানানো হয় রোগীর অবস্থা ভালো নয়। একপর্যায় মায়ের মৃত্যু হলে তা জানানোর পর তারা চিকিৎসকদের কিল ঘুষি মারেন। ডা. মনিশ কান্তি দাস মেঝেতে পড়ে গেলে রবিউল ইসলাম চেয়ার নিয়ে তাকে আঘাত করতে গেলে ঠেকাতে গিয়ে তিনি রক্তাক্ত জখম হন।

পিয়ারুন্নেছার ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতে ১৩ ঘণ্টা মায়ের মরদেহ আটকে রেখে তারা আমাদের সঙ্গে জুলুম করেছে। আমাদের দুই ভাইকেও থানায় আটকে রেখেছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করেছে ইন্টার্ন ডাক্তারা। তারপরও তারা মামলা করেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ডাক্তাররা মায়ের মরদেহ আটকে রাখার কারণে ফুলে উঠেছিল। রোববার বাদ মাগরিব দৌলতপুর পাবলা সবুজ সংঘ মাঠে জানাজা শেষে মরদেহ গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আমরা ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৪ ভাই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দুই ভাই ও আমার বাবা মার খেয়েছেন। মামলার বিবরণে ডাক্তাররা বলছেন তারা রক্তাক্ত জখম হয়েছেন- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।   মূলত মায়ের মৃত্যুর আগের ডাক্তারদের ডাকা হয়েছিল। তারা না আসায় মা মারা গেলে ডাক্তারদের সঙ্গে আমার দুই ভাই বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তখন হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।  

হাসপাতাল ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের (৬৭) স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রোগীর ছেলেরা ডাক্তারদের অবহেলার অভিযোগ এনে ডিউটিরত ইন্টার্নী চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তাদের ডাকা হলেও কেন আসেননি না? আর তখনই বিপত্তি ঘটে। ডাক্তারদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে কেন এমনটি নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মরদেহ আটকে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ ডেকে রোগীর দুইছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

পরে মৃত পিয়ারুন্নেছার স্বামী মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামছুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্সসহ পরিবারের সদস্যরা খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মহানগরীর নতুন রাস্তার মোড়ে খুলনা-ঢাকা মহাসড়ক আধঘণ্টা অবরোধ করে রেখেছিলেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। তারপর মৃতের মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আটক ছেলেদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।